
ছবি: সংগৃহীত
অনেক পরিবারেই দেখা যায়, বাবা-মা তাদের জীবদ্দশায় সন্তানদের মাঝে সম্পত্তি ভাগ করে না দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ভাই-বোনদের মধ্যে কেউ কেউ সকল সম্পত্তি নিজেদের দখলে রাখেন বা অন্যদের প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করা উচিত—তা নিয়ে ব্যারিস্টার লিমা আঞ্জুমান দিয়েছেন বাস্তবধর্মী পরামর্শ।
তিনি বলেন, “প্রথমেই পরিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। আত্মীয়-স্বজন ও মুরুব্বিদের নিয়ে বসে পারিবারিকভাবে সমাধানে পৌঁছানোই সবচেয়ে ভালো উপায়। তবে তাতে কাজ না হলে, আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে আদালতের আশ্রয় নিতে হবে।”
ব্যারিস্টার লিমা আরও বলেন, “আমাদের সমাজে মেয়েরা এই বিষয়ে বেশি অবহেলিত। অনেক সময়ই তারা নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার ব্যাপারে পিছিয়ে থাকেন। অথচ ইসলামে মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ও ন্যায়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত আছে। একাধিক উৎস থেকে (যেমন—বাবার, স্বামীর বা সন্তানের কাছ থেকে) প্রাপ্ত সম্পত্তির পরিমাণ দিনশেষে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে প্রায় সমান হয়ে দাঁড়ায়।”
বিশেষ করে তালাকপ্রাপ্ত বা একা থাকা নারীরা পিতৃসম্পত্তি বুঝে নিতে গেলে আরও বেশি সমস্যার মুখোমুখি হন। এ সময় তারা মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। তাই লিমা আঞ্জুমান পরামর্শ দেন, “যদি পারিবারিকভাবে সমাধান সম্ভব না হয়, তাহলে সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ বা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় আবার বসা উচিত। তাও কাজ না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।”
কীভাবে নেবেন আইনি ব্যবস্থা?
ব্যারিস্টার লিমা জানান, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধে বাটোয়ারার মামলা করতে হয়। অনেকে এটিকে ভিন্ন নামে ডাকলেও মূল অর্থ একই। এ ধরনের মামলা সিভিল কোর্টে করা হয়।
মামলার সময়:
-
বাবা বা মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তির সম্পূর্ণ বিবরণ (চৌহদ্দিসহ শিডিউল) উল্লেখ করতে হয়।
-
একটি পিটিশন ফাইল করতে হয়, যেখানে বাদী এবং বিবাদীদের নাম স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।
-
বাদী যাদের বিরুদ্ধে মামলা করছেন, তাদের সবাইকেই (ভাই-বোনসহ) বিবাদী করতে হবে।
-
কেউ যদি সম্পর্কে ভালো বলে তাকে বাদ দেন, তাহলে মামলার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
তিনি বলেন, “যাদের সম্পত্তিতে আইনগতভাবে অধিকার রয়েছে, সবাইকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবেই সম্পত্তি বণ্টনের বিচারিক রায় পাওয়া সম্ভব।”
সুতরাং, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে জটিলতা হলে প্রথমেই আলোচনায় বসা উচিত। সমাধান না হলে আইনের আশ্রয় নিয়ে নিজের প্রাপ্য বুঝে নেওয়া প্রত্যেকের ন্যায্য অধিকার।
আবীর