
ছবি : সংগৃহীত
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরশহরের পূর্বদিকে নয় নম্বর ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে প্রবাহিত বাদুরদলীর স্লুইস খালটি পৌরশহর ছাড়াও বাদুরতলী, মধ্যটিয়াখালী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। পৌরশহরের একাংশসহ টিয়াখালী ইউনিয়নের চারটি গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে এই খালটি একমাত্র পথ। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটির বাদুরতলী পয়েন্টে রয়েছে স্লুইস । যা পানি ওঠানামার কাজে ব্যবহৃত হয়। ইতোপূর্বে খালটির মাঝখান দিয়ে কয়েকটি বাঁধ দেয়ায় পানির প্রবাহ কমে দুই পাড়ে পলি পড়ে কিছুটা ভরাট হয়ে গেছে।
এরসঙ্গে একশ্রেণীর সমাজশত্রু মাটি ফেলে ভরাট করে দখল করে একের পর এক স্থাপনা তোলে। এভাবে শত শত স্থাপনা তোলা হয়েছে। এই দখল প্রক্রিয়া চরম পর্যায়ে পৌছেছে। এখানেই শেষ নয়, সবশেষ বিগত সরকারের আমলে ২০০ ফুট প্রস্থ খালটির পানির প্রবাহ বন্ধ করে দুই পাশে বাঁধ দিয়ে মাত্র ৩০-৩৫ ফুট প্রস্থ একটি কালভার্ট করা হয়েছে। এটিকে সরকারি অর্থায়নে খাল মারার প্রকল্প বলছে স্থানীয় মানুষ। কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বড় সিকদারবাড়ি এলাকায় এভাবে খালটির পানি চলাচলের পথ আটকে দেওয়া হয়েছে। মাছ ধরার একটি প্রভাবশালী মহল আবার কালভার্টের নিচেও মাটি ভরাট করে দিয়েছে। কোটি টাকার সরকারি অর্থায়নে খাল হত্যার এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। এ খালটি রক্ষায় স্থানীয়রা কলাপাড়া শহওে বিক্ষোভ সমাবেশ পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে কেউ এগিয়ে আসেনি।
খালপাড়ের বাসীন্দা শিক্ষক ফোরকানুল ইসলাম সিকদার জানান, এখানে খালের প্রস্থ অনুসারে একটি গার্ডার ব্রিজ করলে খালটির পানি চলাচলে সমস্যা হতো না। স্থানীয় সচেতন মানুষের মন্তব্য যারা রক্ষক তারাই যদি ভক্ষকের কাজ করেন তাইলে পরিবেশ-প্রতিবেশ টিকবে না।
একইভাবে কলাপাড়া পৌর শহরের ঠিক মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত খালটির চিঙ্গুরিয়া এলাকায় খালের এক তৃতীয়াংশ দখল করে গোরস্থানের দেওয়াল করা হয়েছে। কলাপাড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এমন পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ড করেছে। জোয়ারের সময় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এখন খালটি একারণে ওই অংশে মৃতপ্রায় অবস্থা হয়েছে। পরিবেশ কর্মী আমরা কলাপাড়াবাসী সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, বিগত সরকারের সময় পৌরবাসীর মতামত উপেক্ষা করে জনস্বার্থবিরোধী বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যা কোনমতেই ঠিক হয়নি।
একই দৃশ্য কুয়াকাটায়। কুয়াকাটা পৌরসভার ভবনের পাশ দিয়ে প্রবহমান কচ্ছপখালী-নবিনপুর খালের পাড় দখল করে দেওয়াল করা হয়েছে। ওই খালটির পানির প্রবাহ না থাকলে পৌরবাসীর জলাবদ্ধতা নিরসনের পথ আটকে যাবে। যাদের খাল রক্ষার কথা তারাই সরকারি অর্থায়নে খাল দখল করে তারাই পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করায় দখলদাররা যেন দখলে আরো উৎসাহ পাচ্ছেন। পরিবেশ কর্মী কেএম বাচ্চু জানান, খালটির দখল-দূষণ বন্ধে যাদের প্রধান দায়িত্ব তারাই পরিবেশের সর্বনাশ করেছে। এসব যারা করেছে বা করছে তাদের ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগে অ্যাকশনে যাওয়া দরকার।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, খালের দখল-দূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত এক বছরে কলাপাড়ায় অন্তত ১২টি খালের প্রায় ৬০টি বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। খালের মাটি কাটাসহ দখল বন্ধে মোবাইল কোর্ট চলমান রয়েছে। এছাড়া কলাপাড়া-কুয়াকাটা পৌরসভার খালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আঁখি