ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

সিমলা চুক্তি বাতিলের ঘোষণা পাকিস্তানের

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

সিমলা চুক্তি বাতিলের ঘোষণা পাকিস্তানের

সিমলা চুক্তি বাতিলের ঘোষণা পাকিস্তানের

কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি এমন যে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুধবার ভারতের মন্ত্রিপরিষদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এরপর বৃহস্পতিবার ভারতীয় মেডিক্যাল ভিসাসহ পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তান ঘোষণা দিয়েছে যে, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ওয়াঘাহ সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ থাকবে। এই ক্রসিং দিয়ে ভারত থেকে কোনো পণ্য পাকিস্তানে যাবে না এবং আসবেও না। এছাড়া ভারতের সঙ্গে থাকা সিমলা চুক্তিও বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। খবর বিবিসি, ডন ও এনডিটিভির।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষদিকে ভারত এ যুদ্ধে জড়িত হয়। ওই সময় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে লড়াই হয়। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে শেষ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে ভারত-পাকিস্তান সিমলা শান্তি চুক্তি করে। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি কাঠামো তৈরি, কাশ্মীর সংকটের সমাধান এবং ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণ উপায়ে মেটানো।

এছাড়া চুক্তিতে যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি এবং যোগাযোগের লাইন পুনর্স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল। ভারতের সিন্ধু নদের পানি চুক্তি বাতিলেরও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ বলেছে, নয়াদিল্লি সিন্ধু নদের পানি প্রবাহ ঠেকানোর চেষ্টা করলে পূর্ণশক্তি প্রয়োগ করে এর জবাব দেওয়া হবে। জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, সেনাপ্রধান অসিম মুনিরসহ অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় পাকিস্তান। যার অংশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তি বাতিল, ওয়াঘাহ সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। এগুলোর সঙ্গে নিজেদের আকাশে ভারতীয় মালিকানাধীন অথবা ভারত পরিচালিত সকল বিমান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পাকিস্তান।

এর পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। তারা জানিয়েছে, পাকিস্তান হয়ে তৃতীয় কোনো দেশের পণ্যও ভারতে প্রবেশ অথবা বের হতে পারবে না। এছাড়া সার্কের আওতাধীন বিশেষ ভিসা সুবিধাও বাতিল করেছে পাকিস্তান। 
যেসব ভারতীয়র কাছে এ ভিসা আছে তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে ইসলামাবাদ। এরসঙ্গে পাকিস্তানের ভারতীয় দূতাবাসে থাকা ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। যা আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসে। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই বৈঠকে ভারতের সিন্ধু নদের পানি চুক্তি বাতিলের নিন্দা জানানো হয়। দেশটি সতর্কতা দিয়ে জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদের পানি প্রবাহে বিঘœ ঘটানোর চেষ্টা করে, তাহলে এটি যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর জবাবও সেই হিসেবে দেওয়া হবে। গত মঙ্গলবার ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। 
ভারত দাবি করেছে, এ হামলায় পাকিস্তানের একাধিক নাগরিক অংশ নিয়েছে। তবে পাকিস্তান হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে উত্তেজনার মধ্যেই ভারতে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হয় সর্বদলীয় বৈঠক। বৃহস্পতিবার  রাজধানী নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপির ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজ্জু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মালিকার্জুন খার্গে, কংগ্রেস এমপি রাহুল গান্ধী অথবা অন্যান্য সংসদীয় নেতারা বৈঠকে বসেন।

ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তান এবার ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তান বৃহস্পতিবার একটি সামুদ্রিক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২৪ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে দেশটি তার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের মধ্যে করাচি উপকূল থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর কথা জানিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। যদিও পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতীয়দের পাকিস্তানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে দৃঢ়ভাবে পরামর্শ দেওয়া হলো। যেসব ভারতীয় এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন তাদেরও দ্রুত দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হলো। এর আগে কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের তুমুল সংঘর্ষ ও বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। এই ঘটনায় ভারতের সেনাবাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছেন। উপত্যকাটির উধমপুর জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে।

×