ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময়ের জামিন শুনানি ৩০ এপ্রিল

সিনহা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১৯, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

সিনহা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু

মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। এদিকে জুলাই আন্দোলন দমাতে আইনজীবীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় আওয়ামীপন্থি ৬১ আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি পিছিয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। 
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি  হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে বুধবার এই শুনানি শুরু হয়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।  

এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড , ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের দ-াদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দ-িত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
৬১ আইনজীবীর জামিন ॥ জুলাই আন্দোলন দমাতে আইনজীবীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় আওয়ামী লীগপন্থি ৬১ আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভূইয়া ও আসামিপক্ষে আজহারুল হক শুনানি করেন।
পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় ৬০-৬৫ জনকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। তাদের জামিনের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে যাওয়া হবে কি না পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের ওপর হামলা, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগপন্থি ১৪৪ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

পরে ১১৫ আইনজীবী উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের জামিন নেন। জামিনের মেয়াদ শেষে গত ৬ এপ্রিল ৮৩ জন ঢাকা মহানগর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও নারী আইনজীবীদের জামিন মঞ্জুর করেন। ৬১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি ৩০ এপ্রিল ॥ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি পিছিয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার তার জামিন শুনানির নতুন এই দিন ধার্য করেন আদালত।
এর আগে গত ২৩ মার্চ চিন্ময় দাসের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেছিলেন। সেদিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। শুনানিকালে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য আদালতকে বলেন, তার মক্কেল শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বিচার ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করছেন। তাই তার জামিন প্রার্থনা করেন তিনি।

আলোচিত এ মামলায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে গত বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের একটি বড় সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশের পর গত ৩১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। এতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ছাড়াও আরও ১৮ জনকে আসামি করা হয়।

পরবর্তীতে গত বছরের ২২ নভেম্বর চিন্ময়ের নেতৃত্বে রংপুরে আরও একটি বড় সমাবেশ হয়। এর পর রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় গত ২৫ নভেম্বর তাকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। 
আদালত চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে সেদিন চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময়ের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় আইনজীবীর সাইফুল ইসলাম আলিফকে আদালত চত্বরের বাইরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর পর থেকেই কারাগারে আছেন চিন্ময়। গত ২ জানুয়ারি চিন্ময় দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত। পরবর্তীতে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী।

×