ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

আপিল বিভাগের আদেশ

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বাতিল

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও  প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ।  বুধবার  প্রধান বিচারপতি ড.  সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই রায় দেন।

এই রায়ের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি বাতিল হয়ে গেল বলে জানান উভয় পক্ষের আইনজীবীরা। আদালতে আপিলকারীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আসিফ হাসান।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের ছয় কর্মকর্তাসহ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিল দুদক। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। 
দুদকের পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাটি ঠিক হয়নি এবং এটাকে অপ্রয়োজনীয় হয়রানি বলে মন্তব্য বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আদালতের রায়ে ড. ইউনূসের দায়ের করা আপিল মঞ্জুর হওয়ায় মামলাটি আর চলবে না।  ‘এখানে টাকা আত্মসাৎ হয়নি। টাকা পুরোটাই দিয়ে দিয়েছেন। সেখানে কেউ কম পেয়েছে বা বেশি পেয়েছে।

তার সামান্য অংশ নিয়ে ডিসপিউট (বিরোধ)। সেটা সিভিল কোর্টে হয়। ফৌজদারি কোর্টে নয়। তাই এ মামলা চলতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন , ‘নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারাবিশ্বে সম্মানিত। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী। শতবর্ষে আর কোনো বাংলাদেশী নোবেল পাবেন কি না, জানি না। আমি মনে করি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না।’ 
আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলা করা হয়েছিল। ‘অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে গেলাম। হাইকোর্ট বাতিল আবেদন খারিজ করে দিলেন। পরে আপিল বিভাগে গেলাম। আপিল বিভাগ বললেন, এ মামলা চলে না। কারণ মামলাটি প্রত্যাহার (১১ আগস্ট দুদক মামলা প্রত্যাহারে আবেদন দেন) করা হয়েছে। আমরা বললাম, না, মামলা প্রত্যাহার হয়নি।

কারণ এটি অবৈধ। তিনি (অধ্যাপক ইউনূস) ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসেন। ১১ আগস্ট কোনো নোটিস ছাড়া, বিনা কারণে মামলা বাদ দিলেন।’ তিনি বলেন, ‘এটি বাদ দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই, আমরা তা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হলাম। পরে আবেদনের শুনানিতে বললাম, অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। শ্রমিকের টাকা শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে বিতরণ হয়েছে। এটি তো কোম্পানির টাকা নয়। এখানে তাকে মিথ্যাভাবে হয়রানির জন্য, অপমান করার জন্য মামলাটা করা হয়েছে।’ 
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন। অপর ছয় কর্মকর্তা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
একপর্যায়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলাটির কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তৎকালীন শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা গত বছরের ৮ জুলাই আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৪ জুলাই হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন। হাইকোর্টের সে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

তবে এর মধ্যেই রাষ্ট্র বা দুদকের পক্ষে পিপি মামলাটি প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। গত ১১ আগস্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক। অন্যদিকে লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ২১ অক্টোবর আপিল বিভাগ আদেশ দেন। সে অনুযায়ী আপিল শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

×