
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় পরিচালক রাজু দেবনাথ। সম্প্রতি কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি তারিক চয়নের সাথে সাক্ষাতের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি উক্ত মন্তব্য করেন।
ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড আইডিতে কলকাতায় বাংলাদেশের প্রেস সচিবের সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে তিনি “আমি নিরপেক্ষ না, চির সত্যের পক্ষে” শিরোনামে লিখেছেন:
"আমার সঙ্গের মানুষটির নাম Tarique Choyon, First secretary, Press. (Deputy High Commission for Bangladesh)। ওনার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হলো বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। বাংলাদেশে শান্তি ফেরানোর জন্য ওনারা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত মৌলবাদী মস্তিষ্কের মানুষের জন্য বিষয়টি জটিল হয়ে যাচ্ছে।
তবু নির্বাচনের মাধ্যমে সেখানে সরকার ফিরে আসুক। সরকার যাতে রাজধর্ম পালন করতে পারে সেই আশাই করি।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নির্বাচন সব থেকে বড় প্রয়োজনীয় বিষয়। অনেকে বলবেন, আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে এত চিন্তার কি আছে। আবার বাংলাদেশের অনেক মানুষের মন্তব্য এরকম শুনেছি—বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় বাঙালিরা এত মন্তব্য কেন করে?
আসলে সমস্ত প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে না চাইলেও অন্য দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক অনিবার্য হয়ে ওঠে।
আর বাংলাদেশের সঙ্গে তো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বন্ধন দীর্ঘদিনের। এখন পোস্টমর্ডান গ্লোবালাইজেশন-এর যুগে আমেরিকায় একটি বোমা পড়লে, তার উত্তাপ আমাদের গায়ে এসে লাগতে বাধ্য। সেখানে তো বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে অতীত থেকে জড়িত।
দেওয়া-নেওয়া:
পৃথিবীতে পঞ্চম বৃহত্তর ভাষা 'বাংলা'। সেটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। অনেক ভারতীয় যারা বিশ্বের দরবারে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন, তাদের অনেকের বাড়ি আসলে বাংলাদেশে ছিল। আমাদের বিজ্ঞানচর্চার পেছনে অবিভক্ত বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অবদান অনস্বীকার্য। আর সংস্কৃতির ক্ষেত্রে, সেখানেতো বাংলাদেশ আর আমাদের বাংলা কতভাবে জড়িত।
তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ভারতের, সেটা অস্বীকার করলেও ধ্রুব সত্য। বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে ভারতের বন্ধুত্বের হাত আছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের জন্য ভারতের পণ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার পশ্চিমবঙ্গের বা ভারতের হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলো অনেকটাই বাংলাদেশের রোগীর উপর নির্ভর করে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
এভাবেই প্রতিবেশী দেশগুলো হাজার মতবিরোধ থাকলেও একে অপরকে অবলম্বন করে এগিয়ে চলে।
তাই একজন চিন্তাশীল মানুষ বাংলাদেশ নিয়ে ভাববে, মুর্শিদাবাদ নিয়ে ভাববে, চাকরি হারা মানুষগুলোকে নিয়ে ভাববে, ভাবতে বাধ্য। হয়তো আমাদের মতো ছাপোষা মানুষের তেমন কিছুই করার নেই।
তবু ভাবনা এবং নিরপেক্ষ চিন্তা করতে তো কোনো বাধা নেই। একজন সংস্কৃতির জগতের মানুষ হিসাবে, চিত্রকর, ফিল্ম ডিরেক্টর এবং নাট্যকর্মী হিসাবে বিষয়টিকে আরো গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। শত উস্কানি সত্ত্বেও চাইবো শান্তি ফিরে আসুক—শান্তি ফিরে আসতেই হবে বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে, ভারতে, বিশ্বে।
যারা চায় সমস্ত কিছু ওলটপালট হয়ে যাক, চরম অস্থিরতা বিরাজ করুক চারদিকে; যাতে সেখান থেকে লুটেপুটে খাওয়া যায়; তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। না হলে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকারে চলে যাবে।
বাংলাদেশ আর আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাক, সে প্রতিযোগিতায় থাক স্পোর্টসম্যান স্পিরিট—ইস্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগানের মধ্যে যেমন আছে। এই প্রতিযোগিতা দুজনকে আরও উন্নতির পথে নিয়ে যাবে। কিন্তু সময় হলে দুজনে আবার একসাথে এগিয়ে চলবে।
যে দৃশ্য আমরা তিলোত্তমার মৃত্যুর পরে দেখেছিলাম—ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান কিভাবে এক হয়ে গিয়েছিল একটা বৃহৎ স্বার্থে; সেই অপূর্ব ছবি এখনো আমার চোখে লেগে আছে।
তেমনি প্রতিটি রাজনৈতিক দল, প্রতিটি দেশ হয়তো পৃথক পৃথক আদর্শ, মতাদর্শ, জীবনচর্চায় বিশ্বাসী, কিন্তু আসলে আমরা সবাই এক প্রকৃতির কোলে। তাই আমি নিরপেক্ষ নই—চিরসত্যের পক্ষে।
মারিয়া