
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা সংকটটি গ্লোবাল আলোচনার মানচিত্র থেকে অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল। মানুষের স্মৃতিতেও যেন এটি আর ছিল না যে, এটি একটি বৃহৎ মানবিক সংকট। বাংলাদেশকে যে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার দায়িত্ব নিতে হয়েছে, সেটি আন্তর্জাতিক আলোচনায় আর গুরুত্ব পাচ্ছিল না।
ইন্টারিম সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রফেসর ড. মো. ইউনূস যে কাজটি প্রথম করেন, তা হলো—রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের অফিস গঠন। এর মাধ্যমে তিনি এই সংকটকে আবারও গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে তোলার উদ্যোগ নেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বারবার জানিয়ে দিচ্ছেন যে, এত বিপুলসংখ্যক মানুষ যে মানবিক সংকটে ভুগছে, সেটি শুধু একটি দেশ বা অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং এটি একটি রিজিওনাল ক্রাইসিস এবং ভবিষ্যতে এটি একটি বড় ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় রূপ নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে প্রফেসর ড. মো. ইউনূস সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রেখেছেন। তার উদ্যোগে জাতিসংঘ একটি রেজোলিউশন গ্রহণ করেছে, যার ফলে আগামী সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি আলাদা আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রায় ১৭০টি দেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে, জানান তিনি।
এই ধারাবাহিকতায় আজ একটি ক্লোজ-ডোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে প্রফেসর ড. মো. ইউনূস আবারও রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান অবস্থা এবং করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সংকটটির আন্তর্জাতিকীকরণ এবং তা গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরা। বৈঠকে কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শাইখা হিন্দসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। গাম্বিয়া হচ্ছে সেই দেশ, যারা আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের করেছে। গাম্বিয়ার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, এই সংকট নিয়ে বিশ্বকে বারবার বলতে হবে—এই জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার, রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, একজন জাপানি বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য কর্মকর্তারা। এটি অত্যন্ত সফল একটি প্রোগ্রাম ছিল।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি ধীরে ধীরে আবার আলোচনায় আসছে। ভিমস্টেক সম্মেলনে আমাদের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনায় মিয়ানমার জানিয়েছে, তারা ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। এটিকে প্রত্যাবাসনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এছাড়া কাতার ফাউন্ডেশন শান্তিপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আশেপাশের বনাঞ্চল রক্ষা করতে তারা এলপিজি সরবরাহ করছে, যাতে রোহিঙ্গারা কাঠ না জ্বালিয়ে রান্না করতে পারে। এই সহায়তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে, জানান তিনি।
আজ ডিফেন্স মিনিস্টার, কমার্স মিনিস্টার, কাতারের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার এবং অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে ও হচ্ছে। বাংলাদেশে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা ইস্যু এসব বৈঠকে গুরুত্ব পাবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি, বলেন তিনি।
মারিয়া