ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

আ. লীগ বিরোধিতা করা ছাড়া গত ১৭ বছরে বিএনপি’র রাজনীতি কি সেটা তাদের কর্মীদেরও শিখাতে পারে নাই: নুরুল কবির

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১২:০৯, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

আ. লীগ বিরোধিতা করা ছাড়া গত ১৭ বছরে বিএনপি’র রাজনীতি কি সেটা তাদের কর্মীদেরও শিখাতে পারে নাই: নুরুল কবির

সম্প্রতি এক টকশোতে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবির বলেছেন, “দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগে বিএনপি কোনো আলাদা রাজনৈতিক রূপরেখা বা দিকনির্দেশনা গড়ে তুলতে পারেনি, যা তাদের কর্মীদের কাছেও স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়নি-না মিটিং-মিছিলে, না ভাষণে, না কোনো প্রকাশনায়।”

একদিকে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কিনা, আসলে কি হবে সেই আতঙ্কে আছে,জামায়াত শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে কিনা, বা জামায়াত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটা ডমিনেটিং ফোর্স হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলে ভবিষ্যৎ কি? বিএনপি অগোছালো আপনি নিজেও খানিকটা বিভিন্ন সময় আজকের আলোচনায় উল্লেখ করেছেন। নতুন যে রাজনৈতিক দলটি, অনেকগুলো নতুন রাজনৈতিক দল কিছু নিবন্ধন হয়েছে, গঠিত হয়েছে কিন্তু এনসিপি, যেটি নিয়ে কথা হচ্ছে, তারুণ্যের নাম ইতিমধ্যেই তারা যা কিছু দেখিয়েছে তাতে সবাই যে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারছেন তা বলা যাবে না। বরং কারো কারো মধ্যে ভীতিও তৈরি হচ্ছে। তাহলে আসলে আগামী দিনে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎটা কি?”

উপস্থাপকের প্রশ্নে নূরুল কবির বলেন, “এই মুহূর্তের রাজনৈতিক সিনটা চিন্তা করুন। এমনকি সিনারিওটা যেটা বিকশিত হচ্ছে, সেটা দেখতে গেলে কিন্তু আমরা খুবই একটা ভলনারেবল জায়গার মধ্যে আছি। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে একটা সংকটের মধ্যে পড়েছে অথবা ভবিষ্যৎ আরো পড়বে। বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায্য, কখনো কখনো অন্যায্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ন্যায্য অভিযোগ ছাড়া মিটিংয়ে, মিছিলে, বক্তৃতায়, সেমিনারে, সিম্পোজিয়ামে তারা এই আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা ছাড়া, তার পারফরম্যান্সের সমালোচনা করা, আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সমালোচনা করা ছাড়া তাদের যে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি, এটা কি হওয়া উচিত, এটার স্বরূপ কি, এটার ম্যানিফেস্টেশনগুলি কি কিভাবে হবে, এ কখনো আলাপ করে নাই।

 

তিনি বলেন,অর্থাৎ সেই অর্থে প্রায় ১৭ বছর ১৮ বছর ধরে, দেড় যুগ ধরে, বিএনপি তার কোন আলাদা রাজনীতি আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করা ছাড়া, সে বিরোধিতার মধ্যে বিশাল ন্যায্যতা আছে তার রাজনীতি কি-এটা তার কর্মীদেরকেও শিখায় নাই। মিছিলে মিটিংয়ে না, বক্তৃতায় ভাষণেও না, পত্রপত্রিকা বা পুস্তিকার মধ্যেও না।”

নূরুল কবির বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন এই আন্দোলনের মধ্যে পতিত হয় এবং যারা সমাজে থেকে ডিসপিয়ার করে যায় কত বছরের জন্য সেটা পরের আলোচনা। তো বিএনপির তো রাজনীতি থাকে না। তাহলে বিএনপি এত বড় একটা রাজনৈতিক দল, সে যদি তার সমস্ত নেতাকর্মীদের জন্যে বা সমর্থকদের জন্যে, এমনকি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য তার রাজনৈতিক কর্মসূচি কি সেটা পরিষ্কারভাবে বলতে না পারে, তখন এটা শুধু তাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বাংলাদেশের একটা রাজনৈতিক কমিউনিটি গড়ে তুলবার জন্যে এই যে রাজনীতির ব্যাপারে অসচেতনতা, এটা একটা বিপদ জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরি করে।”


নূরুল কবির আরো বলেন, “দেশের বর্তমান রাজনীতির চিত্রটা সুখকর নয়। এর কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর যে চরিত্র, তাদের যে সীমাবদ্ধতা সেগুলো তিনি দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, যে সরকার আছে তারও রাজনীতি নেই। তার মধ্যে দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা অভাব রয়েছে, অস্বচ্ছতা রয়েছে এবং সরকার প্রধানের সঙ্গে তার অপরাপর যে পারিষদবর্গ আছে তাদের চিন্তার ঐক্য নিয়ে তার মধ্যে সংশয় আছে।”

নূরুল কবির বলেন, “অধ্যাপক ইউনুসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির মিটিং সফল হয়েছে কিনা, সেটা দুই দেশ দুই রকম সরকারি ন্যারেটিভ তৈরি করতেই পারে। কিন্তু আমরা বাস্তব ফলাফল দেখেছি যে, তার দুইদিন পরে ওই মিটিংয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদির সরকার একক দায়িত্বে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি ভঙ্গ করেছে। বাতিল করে দিয়েছে। তাহলে এইটা দুইজনের মধ্যে কোনো সফল বা ইতিবাচক মিটিং হয়েছে এটা প্রমাণ করে না।”

তিনি বলেন, “আর অপরাপর যেসব সমস্যাগুলি আছে সেই সমস্যাগুলো দেখার জন্যে কি ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি তারা গ্রহণ করবে? আমি আগেই বলেছি, তাদের তো এটা তো মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপার। তাদের তো এই সরকারের তো নির্দিষ্ট কোন রাজনীতি নেই। রাজনীতিটা যদি না থাকে তার ফরেন পলিসি কি হবে, সেটা তো আপনার ওই সরকারের কোনো একটা সরকারের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নির্ধারিত হয়। ফলে তাদের কাছ থেকে এই সরকারের কাছ থেকে আমাদের বৈদেশিক সম্পর্কগুলোর যে সমস্ত ক্ষেত্রে সমস্যা আছে, সেগুলোর সমাধান আশা করা ভিত্তিহীন হবে।

তিনি বলেন,এ কারণে আমি বলি যে এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে যে রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বিকাশ ঘটেছে তার পক্ষে সিভিল সোসাইটির সজাগ থাকা, রাজনৈতিক দলগুলো যারা ক্ষমতায় যাবে তাদের উপর চাপ রাখা জরুরি। এবং দ্রুততম সময়ে একটা প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি, যাতে এই গণভুত্থানের চেতনার সঙ্গে মিলে নতুন সরকার কাজ করতে পারে এবং যদি তারা না পারে অথবা না করে সেখানে এই গণভুত্থানের চেতনার তরফে এই চাপটা জারি রাখতে হবে।”

নূরুল কবির বলেন, “এই সরকারের যেহেতু নিজস্ব কোনো দৃষ্টিভঙ্গি নেই, কালেকটিভলি, ফলে আমি আশা করি না যে তারা এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।”


নূরুল কবির বলেন, “জামাতে ইসলামী তার রাজনীতি খুব পরিষ্কার এই দেশে। তারা এখানে একটা ইসলামিক রাষ্ট্র চায়। বা এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মৌল চেতনার পরিপন্থী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই মিলে পাকিস্তানের ইসলামী রাষ্ট্রের জবরদস্তির বিরুদ্ধে, গণহত্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। ফলে এখানে ধর্মের স্বাধীনতা যেমন থাকবে, রাষ্ট্রের আবার একই সঙ্গে একটা সেক্যুলার চরিত্র থাকবে, সেটার বিরুদ্ধে সে রাজনীতি করে।”

তিনি আরো বলেন, “ফলে এটা যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজ এ ব্যাপারে সচেতন থাকবে, বৃহত্তর অংশবিদার থাকবে তার রাজনীতির একটা পর্যায়ে পরে বিকশিত হবে না। আর এই গণভুত্থানের মধ্য দিয়ে তার কিছু পরিমিতিবোধের অভাব আমরা লক্ষ্য করেছি। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

নূরুল কবির বলেন, “পরিমিতিবোধ মানে তাদের একটা এমনভাবে তারা এসার্ট করা শুরু করল যেন দেশটা শুধুই তাদের হয়ে গেছে। তারা দাবি করা শুরু করলে, এনে এই আন্দোলনের তারা হচ্ছে মূল কর্ণধার ছিল। এটা ঐতিহাসিকভাবে অসত্য। অভিজ্ঞতার দিক থেকে এবং তথ্যের দিক থেকে এটা সত্য নয়।”

তিনি বলেন, “সুতরাং যেই যেটা তার কিছু শক্তি সঞ্চয় হয়েছে, আর রাজনৈতিক যে শক্তি সেটা এই তরুণদের কথা বলছেন, এই তরুণদেরও কোনো রাজনীতি এখনো জেল করে নাই। কারণ তরুণরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন মতাদর্শ থেকে এসেছিল। তারা একটা রাজনৈতিক দল করবার জন্য আসেও নাই। আন্দোলন যখন যারা করেন। আন্দোলন পরবর্তী বিজয়ের মধ্য দিয়ে তারা একটা আফটার থট হিসেবে এটা করেছেন। ফলে এটা আরেকটা গেল।”

নূরুল কবির আরো বলেন, “আর আছে ছোট ছোট মধ্যপন্থী বামপন্থী কিছু রাজনৈতিক দল তারা তাদের নানান ঐতিহাসিক এবং আপন আপন সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের চিন্তাভাবনার অনেকের তুলনায় উন্নততর হলেও নানান কারণে জনগণের উপর তাদের তেমন কোনো প্রভাব নাই। এই চিত্রটা কিন্তু একটা দেশের রাজনীতির গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্যে এই চিত্রটা খুব সুখকর নয়। ফলে সেটা একটা বিপদজনক দিক। সঙ্গে আছে একটা সরকার, যে সরকারেরও কোনো রাজনীতি নাই।”

নূরুল কবির বলেন, “বাট রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বেসিক্যালি রাজনৈতিক জিনিস। তো রাজনীতিটা যদি একটা দেশের জন্য স্বচ্ছ না থাকে, সমস্ত রাজনৈতিক গ্রুপ হিসেবে যারা কাজ করে, দল হিসেবে যারা কাজ করে, তাদের যদি তার স্বচ্ছ রাজনীতি না থাকে তখন সেই দেশ, জনগোষ্ঠী, সেই সমাজ অনেক দুর্বল থাকে। এটা এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে রাজনীতির আলাপ অনেক বেশি বেশি করে করতে হবে।”

নূরুল কবির বলেন, “সরকারের সামষ্টিক যে দর্শন রাজনৈতিক বা সংস্কারের কোন দর্শন আছে বলেও তিনি মনে করেন না। সব মিলিয়ে তবে আকাঙ্ক্ষার দিক থেকে তিনি মনে করেন এখনো পর্যন্ত বিশ্বাস করেন যে সরকার প্রধান যে সময় সীমা বেঁধে দিয়েছেন নির্বাচনের জন্য, সেই সময়ের মধ্যে হয়তো নির্বাচনটা বাংলাদেশে হবে তিনি আশা করছেন এবং সরকার সেটা করতে চাইবে। তবে যারা বলছেন যে গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন প্রয়োজন নাই, সেই ধারণার সঙ্গে তিনি একমত নন। এবং তিনি মনে করেন যে নির্বাচনী গণতন্ত্র দিবে এর যেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন একটা প্রাথমিক নূন্যতম পূর্ব শর্ত সেটা পূরণ হওয়া দরকার এবং যেকোনো দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এবং সে কারণে তিনি মনে করেন যে দেশে একটা অবাদশ্রেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ভালো নির্বাচন যত সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করা যায় সেটা মঙ্গলজনক হবে।”

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/yw7pazw9

আফরোজা

×