ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

চাকরির প্রলোভনে নারীকে যৌন নির্যাতন ও ৭০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় পলাতক প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০১:৪৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

চাকরির প্রলোভনে নারীকে যৌন নির্যাতন ও ৭০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় পলাতক প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীকে যৌন নির্যাতন ও কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় সদর উপজেলার ঝাউদি শেখ শহিদুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে সদর উপজেলার কুলপদ্দি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন যাবত পলাতক ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি মাঝে মাঝে স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে নিতেন।

অভিযোগ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে দেড় বছর আগে বরখাস্ত করা হলেও এখনও বেতন-ভাতা তুলেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০২৩ সালের ২৪ জুন মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি এলাকার শেখ শহিদুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নাইট গার্ড ও আয়া পদে নিয়োগ দিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ সময় ডিজির প্রতিনিধি ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার উপস্থিত ছিলেন।

তবে পরীক্ষার আগে আয়া পদে নিয়োগ দিতে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান হাওলাদার চাকরি দেওয়ার কথা বলে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের পূর্ব চিরাইপারা গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লাভলীর শেষ সম্বল জমি বিক্রির ৫ লাখ টাকা দেন।

এরপর লাভলী পরীক্ষায় পাস করলেও বেশি টাকার বিনিময়ে ওই পদে ঝাউদি ইউনিয়নের মধ্যঝাউদি গ্রামের নিজাম শিকদারের মেয়ে মর্জিনাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরি না পেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন লাভলী।

অপরদিকে অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নাইট গার্ড পদে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই প্রধান শিক্ষক প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকার নিরাপত্তা বাবদ চারজনকে ব্যাংকের চেক লিখে দেন তিনি।

পরে চাকরি দিতে না পারায় ও টাকা ফেরত না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। এর পরই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান লুৎফর। পরবর্তীতে কাজী আলমগীর হোসেনের দায়ের করা ২৫ লাখ টাকার মামলায় লুৎফর রহমান হাওলাদারকে এক বছরের কারাদণ্ডসহ ৪টি এনআই অ্যাক্টের মামলায় ওয়ারেন্ট আদেশ দেন আদালত।

এসব ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক পদ থেকে লুৎফর রহমান হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঝাউদি শেখ শহিদুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কাঞ্চন মোল্লা, ইয়ামিন মোল্লা, আল আমিন হাওলাদার, কাজী আলমগীর হোসেন, লাভলী আক্তার, কুলসুম আক্তার, ফাতেমা আক্তার ও বিল্লাল শিকদারসহ বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক। ২০২৩ সালের ২৪ জুন নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি থেকে বঞ্চিত হন ওই ৮ জন প্রার্থী। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে গণশুনানি, ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

কয়েকটি অফিস তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়। ঘুষ প্রদানের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক চেকসহ অডিও, ভিডিও রেকর্ড রেখে দেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে বেতন কাঠামো চালু হওয়ার সুযোগ নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন এক বছরের সাজাপ্রাপ্তসহ একাধিক মামলার আসামি ও বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক। এছাড়া তার বিরুদ্ধে এক চাকরি প্রার্থী নারীকে যৌন হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী ইয়ামিন মোল্লা ও কাঞ্চন মোল্লা জানান, অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের দুজনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন লুৎফর রহমান হাওলাদার। কিন্তু তাদেরকে চাকরি দেননি তিনি। একপর্যায়ে টাকা ফেরত না পেয়ে তার দেওয়া ব্যাংক চেক দিয়ে এনআই অ্যাক্টে মামলা দায়ের করেন কাঞ্চন। এ ঘটনায় ঘুষ গ্রহণকারী প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান হাওলাদারের কঠোর শাস্তি ও টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন জানান, ‘একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি লুৎফর রহমান হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। এসআই ইব্রাহীমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে একাধিক চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে। তিনি একটা মামলায় এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’

সুবল বিশ্বাস/রাকিব

আরো পড়ুন  

×