
ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে
ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, ফলপ্রসূ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাবেন। শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন বলে ঘোষণা করেছেন তারা। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা খানের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত প্রকাশ করেননি। তারা তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাত ৮টায় সংবাদ সম্মেলন করে জানাবেন বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন আন্দোলনের অন্যতম নেতা জুবায়ের পাটোয়ারী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, এখনই কোনো সিদ্ধান্ত আমরা জানাব না। রাতে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে। এর আগে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি না মানা হলে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দেন।
তবে সূত্র বলছে, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য আসতে পারে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কারিগরি ছাত্র আন্দোলন ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক ও রেল অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এতে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কারিগরি ছাত্রআন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র প্রতিনিধিরা সোমবার কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিবের সঙ্গে এ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্র প্রতিনিধিদের ৬ দফা দাবির মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের লক্ষ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ (টিএমইডি) আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আন্দোলনরত ছাত্রদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। এরই মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের লক্ষ্যে এ বিভাগ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, আইইবি, আইডিইবি এবং ছাত্র প্রতিনিধিসহ আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি দাবিগুলো পূরণে সুপারিশ প্রণয়ন করবে। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের সঙ্গে ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ফলপ্রসূ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত ছাত্ররা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাবেন। শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন বলে ঘোষণা করেন তারা।
এদিকে দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তালুকদারের সই করা অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এবং সদস্যসচিব হিসেবে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিবকে (কারিগরি অধিশাখা) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. সাব্বির মোস্তফা খান, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) সদস্যসচিব প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের (পরিকল্পপনা ও উন্নয়ন) পরিচালক, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস বাংলাদেশের (প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ) অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল আজিজ, সিলেট ও রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফয়সাল মুফতী এবং কারিগরি ছাত্রআন্দোলনের প্রধান কার্যনির্বাহী উপদেষ্টা রহমত উল আলম। আদেশে বলা হয়, এ কমিটি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন রূপরেখার একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
গত কয়েকদিন ধরেই কারিগরি বিভাগের শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে। ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে তারা বারবার সরকারকে অনুরোধ করছেন। কারিগরি ছাত্রআন্দোলনের উত্থাপিত ছয় দফা দাবি হলো- জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে।
পাশাপাশি ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছরমেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (দশম গ্রেড) পদ চার বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিচের পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।