ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

ঢাকায় গত ৯ বছরে নির্মল বায়ু ছিল ৩১ দিন

বায়ুদূষণের কারণে বছরে দেশে লক্ষাধিক মানুষের অকাল মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২২ এপ্রিল ২০২৫

বায়ুদূষণের কারণে বছরে দেশে লক্ষাধিক মানুষের অকাল মৃত্যু

বায়ুদূষণ

ঢাকায় গত ৯ বছরে ৩ হাজার ১১৪ দিনের মধ্যে মানুষ মাত্র ৩১ দিন অর্থাৎ মাত্র ১ শতাংশ নির্মল বা ভালো বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। তবে এক্ষেত্রে ৬২৪ দিন বা ২০ শতাংশ মাঝারি বায়ু, ৮৭৮ দিন  বা ২৮ শতাংশ সংবেদনশীল বায়ু, ৮৫৩ দিন বা ২৭ শতাংশ অস্বাস্থ্যকর, ৬৩৫ দিন বা ২১ শতাংশ খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৯৩ দিন বা ৩ শতাংশ দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করেন।

বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মাত্রা এত বেশি মাত্রায় দাঁড়িয়েছে যে, ঢাকা শহরে এখন বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিন দিন এই দূষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই এই দূষণ বন্ধ করতে না পারলে ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। 
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (নিচতলা) শফিকুল কবির মিলনায়তন হলে ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫ : বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’-শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাপার সভাপতি, অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক, মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
মূল প্রবন্ধে ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে অবস্থিত ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ হতে ২০২৪ সালের অর্থাৎ ঢাকার গত ৯ বছরের বায়ুমান সূচক বা একিউআই এর তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। ২০২৪ সালের সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিনসংখ্যা হল যথাক্রমে ২ ও ৩৫ দিন। বিশ্বব্যাংকের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে কমপক্ষে ২৩৬,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এর গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বায়ু ও সিসাদূষণসহ বিভিন্ন দূষণ, যা শিশুদের আইকিউ হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মাত্রা এত বেশি মাত্রায় দাঁড়িয়েছে যে ঢাকা শহরে এখন বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিন দিন এই দূষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই এই দূষণ বন্ধ করতে না পারলে ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে। বায়ুদূষণের শিকার সবচেয়ে বেশি শিশু ও বৃদ্ধ। এর ফলে বৃদ্ধ ও শিশুদের শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজম্মের শিশুদের কথা চিন্তা করে দূষণ বন্ধ করি। 
সংবাদ সম্মেলন থেকে দফা সুপারিশসমূহ তুলে ধরা হয়: ১. দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পরিবেশ সংস্কার কমিশন গঠন করা; ২. বায়ুদূষণকারী মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি; ৩.বায়ু দূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; ৪. বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা; ৫. বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজসহ সর্বস্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামানো; ৬. আইইপিএমপির সহ বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা এবং নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা; ৭. বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ; ৮.    সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া; ৯.    গৃহঅভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে গ্রামীণ পর্যায়ে জীবাশ্ম জ্বলানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি নিশ্চিত করা।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাপার সহ-সভাপতি ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, ড. এম. ফিরোজ আহমেদ, বাপার সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহীদুল ইসলাম, বাপা সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক, হুমায়ুন কবির সুমন প্রমুখ।

আরো পড়ুন  

×