
ছবিঃ জনকণ্ঠ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের হয়রানি ও জিম্মি করে প্রতারণার অভিযোগে ১৪ দালালকে আটক করেছে র্যাব-১৪। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) অভিযান চালিয়ে আটক করে ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১৪’র একটি দল। অভিযানে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, মহিলা ওয়ার্ড, পরীক্ষাগার, আউটডোরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৪ দালালকে হাতে-নাতে আটক করে। পরে তাদের সঙ্গে থাকা ১৪টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন,মন্টু মিয়া (২৫), মো.মাসুদ (৪৫), আলাল উদ্দিন (৬০), মো.আশরাফুল (২৭), মো.বিজয় (৫০), মো.আকাশ (২৪), ছোবহান মিয়া (৬৫), সুমন মিয়া (৩০), শাহদাৎ হোসেন বাবু (৩০), মো.শাকিব (২৪), আনিছ হোসেন রকি (৩৫), সাদ্দাম হোসেন (২৯), মমিনুল ইসলাম রবিন (৩০) এবং রোকসানা আক্তার (৩৫)। এরপর বিধি অনুযায়ী আটককৃত দালালদের সর্বনিম্ন ১৫ দিন এবং সর্বোচ্চ ২ মাস মেয়াদে সাজা দেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ দালাল-প্রতারক চক্রকে ধরতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত আবেদন জানানোর পর এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অসহায় সাধারণ মানুষ যখন হাসপাতালে সেবা নিতে আসে তখন সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে চক্রটি নানাভাবে রোগী এবং তাদের স্বজনদের হয়রানি করে আসছিল। এই চক্রের ১৪ জনকে হাতে-নাতে ধরা হয়েছে। জনস্বার্থে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
র্যাব-১৪’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুজ্জামান বলেন, ‘আটককৃতরা হাসপাতালটিকে চারদিকে ব্লক করে রেখেছিল। গ্রামাঞ্চল থেকে রোগী আসলে তাদের টার্গেট করে হয়রানির মধ্যে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিত। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে রোগী ও স্বজনদের বেকায়দায় ফেলতো। মূলত এই চক্রটিকে আইনের আওতায় এনে স্বস্তির লক্ষ্যে আমাদের এই অভিযান কার্যক্রম।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা নগরীর গাঙ্গীনাপারের হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দালালদের অত্যাচারে রোগীর চিকিৎসা করা কঠিন।’ নান্দাইলের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশ্যে আসি। পরে একজন দালালের খপ্পরে পড়ে বেসকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হই। এতে আমার ১৫ হাজার টাকা খোয়া যায়। যা কোন কাজে আসেনি। পরে বাবাকে পুনরায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আজকে যে অভিযানটি হল সেটি স্বস্তির খবর। এমন অভিযান প্রতি সপ্তাহে দরকার।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘এক হাজার শয্যার বিপরীতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার। যাদের বেশিরভাগ সেবা নিতে এসে বিভিন্ন সময় দালালদের খপ্পরে পড়ে। এই অভিযানের ফলে দালালদের দৌরাত্ম কিছুটা হলেও কমবে। কারণ আমাদের পক্ষে বাহিরে কী হচ্ছে না হচ্ছে সবসময় লক্ষ্য রাখা সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেবা নিতে আসা মানুষজনকে আরও সচেতন হতে হবে। কারণ হাসপাতালের বিকল্প বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল হতে পারে না।’
আরশি