ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

একবার ভোট দিয়েছে মানেই ৫ বছরের জন্য জনগণ সরকারকে ব্ল্যাঙ্কচেক দেয়নি, যা খুশি তা করার : এনসিপি নেতা সারোয়ার

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ২২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৭:২৬, ২২ এপ্রিল ২০২৫

একবার ভোট দিয়েছে মানেই ৫ বছরের জন্য জনগণ সরকারকে ব্ল্যাঙ্কচেক দেয়নি, যা খুশি তা করার : এনসিপি নেতা সারোয়ার

ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, "ভোট দিয়েছে মানে এই না যে জনগণ সরকারকে পাঁচ বছরের জন্য একটি ব্ল্যাঙ্কচেক দিয়ে দিয়েছে—যে আপনি যেকোনো কিছু করবেন এবং বলবেন, ‘জনগণ তো আমাকে একবার ভোট দিয়েছে।’"

তিনি বলেন, “২০০১ এবং ২০০৮ সালের সীমানা পুনঃনির্ধারণের রাজনীতিকে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। এটা একটি ফান্ডামেন্টাল প্রশ্ন হয়ে উঠছে, যা সামনে আরও জোরালোভাবে আসবে। বর্তমানে গণভোটের কথা বললেই বিএনপি এটাকে এমনভাবে উপস্থাপন করছে যেন আমরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছি। তারা বলছে, আমরা কমিশনের আইডিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছি এবং নানা কৌশলে নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছি।”

বিএনপি নেতা মাশরাফ হোসেনের ইউটোপিয়া প্রসঙ্গে সারোয়ার তুষার বলেন, “আমরা যে ‘ইউটোপিয়ান’ ভাবনা তুলে ধরছি, সেটি ইউরোপিয়ান দেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিদ্যমান। গত ৫৩ বছরে আমরা এক ধরনের ডিস্টোপিয়ায় ছিলাম, যার মধ্যে গত ১৫ বছর ছিল চূড়ান্ত রূপ। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের কিছুটা ইউরোপিয়ান মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। এটা কারও কাছে ইউটোপিয়া মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্র, সরকার, দল, প্রশাসনের মধ্যে স্পষ্ট সেপারেশন থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতায় এলে একটি দল এবং সেই দলের প্রধানই সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। রাষ্ট্র, সরকার, দল ও প্রশাসন একাকার হয়ে যায়। অথচ এগুলোর আলাদা কাঠামো থাকা উচিত। এখন সরকার রাষ্ট্রকে গিলে খেয়ে ফেলছে।”

তিনি আরও বলেন, “জনগণ যদি একটি দলকে ভোট দেয়, তা মানেই এই নয় যে তারা একবারেই সব বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। জনগণ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারে, আবার সাংবিধানিক সংস্কারের মতো বিষয়েও তাদের আলাদা মতামত জানার সুযোগ থাকা উচিত। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানে নানা ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন এনেছে, যার পেছনে রয়েছে এই ভুল ধারণা যে জনগণ একবার ভোট দিলেই সবকিছু করা যায়।”

সারোয়ার তুষার বলেন, “বাংলাদেশে টু-থার্ড মেজরিটির ধারণাটাও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আপনি দেখবেন—৯১ সালে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, ৯৬ সালে আওয়ামী লীগও না। অথচ ২০০১ সালে বিএনপি এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ হঠাৎ করে টু-থার্ড মেজরিটি অর্জন করে। এর পেছনে সীমানা পুনঃনির্ধারণের রাজনীতি কাজ করেছে—যেখানে যে অঞ্চলে ভোট বেশি, সেখানে আসন বাড়ানো হয়েছে, আর যেখানে কম, সেখান থেকে আসন কমানো হয়েছে। এভাবেই রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সংবিধান সংশোধন একটি বড় বিষয়, যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকবে কি না, সেটাও একটি ফান্ডামেন্টাল প্রশ্ন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে এটি ছিল না, অথচ তারা ক্ষমতায় গিয়ে এই ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। যদি আপনি আগে জানান না এবং পরে জনগণের ভোটকে টু-থার্ড কনসেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে বলেন যে আপনি সব কিছু করতে পারেন—তাহলে সেটি আসলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”

তথ্যসূত্রঃ https://youtu.be/ijBZ49r0gKo?si=jszxlVeLtPR-foij

মারিয়া

×