ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

ইউনান প্রদেশের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:২০, ২২ এপ্রিল ২০২৫

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ওয়াং ইউবো

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করতে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
গভর্নরের প্রথম বাংলাদেশ সফরকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা কেবল শুরু। আমরা এত কাছাকাছি, তবুও এত দূরে। আসুন, এ পরিস্থিতি বদলে ফেলি। আমরা আশা করি আপনি আবারও আমাদের দেখতে আসবেন। আমরা ভালো প্রতিবেশী হতে চাই, তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হতে চাই।
প্রধান উপদেষ্টা তার সাম্প্রতিক চীন সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, এটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি চীনের উষ্ণ আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং সম্পর্ক উন্নয়নে উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে ধন্যবাদ জানান।
গভর্নর ইউবো অধ্যাপক ড. ইউনূসের বক্তব্যে আন্তরিকভাবে সাড়া দিয়ে বলেন, আমার এই সফরের উদ্দেশ্য হলো আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করা। ইউনান দক্ষিণ এশিয়ার জন্য চীনের উন্মুক্ত কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত।
প্রধান উপদেষ্টা ও গভর্নর যুব বিনিময়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন যৌথ উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। গভর্নর ইউবো জানান, ইউনানে একটি চীনা ব্যাংক ইতোমধ্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি দুদেশের অভিন্ন সামাজিক লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, চীনে অনেকেই এই পদ্ধতির সুফল পাচ্ছেন।
তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ও ভাষা শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানো এবং সামুদ্রিক খাবার, আম ও কৃষিপণ্যের মতো খাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেন। ইয়াং ইউবো বলেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগে জোর দিতে হবে এবং আমাদের অঞ্চলগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা এ সময় গভর্নরের প্রস্তাবগুলোর প্রতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন, আপনি যা বলেছেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য বা প্রশিক্ষণ বিষয়ে আমরা সবকিছুর সঙ্গে একমত। আমরা এগুলো আগের চেয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা আরও ঘনিষ্ঠ অংশীদার ও প্রকৃত বন্ধু হতে চাই।
বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবাকে মূল অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশী রোগীদের জন্য কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণসহ চিকিৎসা ও পর্যটন সেবা চালুর ক্ষেত্রে চীন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই সহযোগিতা আমাদের অংশীদারিত্বের একটি নতুন অধ্যায়।
উভয় পক্ষ শিক্ষা বিনিময় বাড়ানোর গুরুত্ব নিয়েও একমত হন। বর্তমানে প্রায় ৪শ’ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছে এবং অধ্যাপক ড. ইউনূস উল্লেখযোগ্য হারে এই সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা আমাদের তরুণদের চীনে পড়াশোনা ও ভাষা শেখায় উৎসাহিত করব।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে প্রধান উপদেষ্টা পারস্পরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং নতুন সমৃদ্ধির সুযোগ উন্মোচনে চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বাংলাদেশের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন  

×