ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ আসামি ৮ জন

জুলাই গণহত্যা মামলার প্রথম প্রতিবেদন জমা ট্রাইব্যুনালে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২১ এপ্রিল ২০২৫

জুলাই গণহত্যা মামলার প্রথম প্রতিবেদন জমা ট্রাইব্যুনালে

জুলাই গণহত্যা মামলার প্রথম প্রতিবেদন জমা

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার প্রথম মামলা হিসেবে রাজধানীর পুরান ঢাকার চাঁনখারপুলের ঘটনার তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। এ ঘটনায় ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত  প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ১৯৫ দিনের মধ্যে এই তদন্ত  কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। চানখাঁরপুলে গুলি করে ৬ জনকে হত্যার মামলায় চিফ প্রসিকিউটর বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত  সংস্থা।

রবিবার তদন্ত সংস্থার পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন জমা হয়। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান। তদন্ত সংস্থার তদন্তে ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে সংযুক্ত আছে ১৯টি ভিডিও, ১১টি পত্রিকার প্রতিবেদন, দুইটি অডিও, ১১টি বই ও রিপোর্ট এবং ছয়টি মৃত্যু সনদ।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, চানখাঁরপুলের গণহত্যার তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। রবিবার তদন্ত সংস্থা আমাদের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জুলাই আগস্টে গণহত্যার প্রথম কোনো ঘটনার তদন্তের কাজ শেষ হয়েছে। চাঁনখারপুলের গত ৫ আগস্টের ঘটনায় ছয় জন নিহত হন। এই রিপোর্টে আমরা ৮ জনকে আসামি হিসেবে পেয়েছি।

তিনি বলেন, এই ৮ আসামির মধ্যে রয়েছেন- ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা জোনের সাবেক এডিসি শাহ আলম, এসি মো. ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন এবং কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম। 
এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম। বাকি চার আসামি পলাতক আছেন।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, তদন্তে উঠে এসেছে, পলাতক আসামি হাবিবুর রহমানসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন অথবা তা তত্ত্বাবধান করেছেন। তারা অধীনস্থদের নির্দেশ প্রদান, সহযোগিতা ও সহায়তার মাধ্যমে এই হত্যাকা- সংঘটনে ভূমিকা রাখেন। এছাড়া আসামিরা এসব অপরাধ সংঘটন থেকে অধীনস্তদের বিরত রাখেননি বা পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যবস্থাও নেননি। এসব কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং তা শাস্তিযোগ্য  অপরাধ।  
তাজুল ইসলাম বলেন, যারা সিনিয়র অফিসার তাদের বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির অভিযোগে এবং যারা সরাসরি গুলি করেছেন বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে এই আটজনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট  তৈরি করা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পুলিশের আইজিপির সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে।  
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, গতকাল (রবিবার) তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে আমার কাছে চাঁনখারপুলের ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই রিপোর্ট পাওয়ার পর আমাদের এখন ফরমাল চার্জ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগামী অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটা আমরা আদালতে দাখিল করব। পরবর্তীতে আইনের যে প্রক্রিয়াগুলো  আছে, সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।  
তিনি বলেন, এই আটজনের বিরুদ্ধে যে সমস্ত ধারায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেগুলো হচ্ছে- ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩ এর অ্যাক্ট ৩ এর (২), ৩ এর  (২ এ, এফ, জি, এইচ) এবং ৪ এর (১), ৪ এর (২) ও ৪ এর (৩) ধারায় মানবতাবিরোধী অপরাধ। তিনি আরও বলেন, চাঁনখারপুলের গণহত্যা ঘটনায় নিহতরা হলেন- শহীদ শাহরিয়ার আনাস খান, শহীদ শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, শহীদ মোহাম্মদ ইয়াকুব, শহীদ মোহাম্মদ রাকিব হাওলাদার, শহীদ মোহাম্মদ ইসমামুল হক, শহীদ মানিক মিয়া। এই ৬ জনের হত্যাকা-ের ঘটনার সঙ্গে যেসব দোষী যুক্ত আছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

×