ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

সিন্ডিকেট না থাকলে দেড় লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সম্ভব

প্রকাশিত: ১৯:২০, ২১ এপ্রিল ২০২৫

সিন্ডিকেট না থাকলে দেড় লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সম্ভব

ছবি: সংগৃহীত

সিন্ডিকেট ভাঙ্গা গেলে মালয়েশিয়াতে মাত্র দেড় লাখ টাকায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব। কিন্তু সিন্ডিকেট নিয়ে গত এক দশক ধরে এত বড় কেলেঙ্কারি হবার পরও এখনো সেটা ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। যখনই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সম্ভাবনা দেখা দেয়, চুক্তি হয়, তখনই ওই সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়। এমনই অভিযোগ করেছেন বায়রার একটি প্রতিনিধি দল।

তারা দাবি জানিয়েছেন সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকালোপাটকারী সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের বিচার করে মালায়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সংকট সমাধানপূর্বক সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য দেশটির শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে হবে।

সোমবার এসব দাবিতেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বায়রার সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজুল ইসলাম,  নোমান চৌধুরী, সিনিয়র সদস্য খন্দকার আবু আশফাক ও বায়রা নেতা  ফখরুল ইসলাম। এদিনের স্মারকলিপিতে  উল্লেখ করা হয় সাবেক স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দাতুশ্রী আমিনের নেতৃত্বে সালমান এফ রহমান, শেখ রেহানা, সাবেক এম পি আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম, সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল ও তার পরিবার, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক সচিব ড. মনিরুস সালেহীন, সাবেক এম পি বেনজির আহমেদ, সাবেক এম পি লেফটেনেন্ট জেনারেল মাসুদ, সাবেক এম পি নিজাম হাজারী, বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার, বায়রার সাবেক মহাসচিব আলিহায়দার চৌধুরী সহসাবেক সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের যোগসাজসে মালয়েশিয়া শ্রম বাজারে চরম অরাজকতা, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী প্রত্যেক কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে সকল খরচের অতিরিক্ত ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। ফলে প্রত্যেক কর্মীকে ৪/৫ লক্ষ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যেতে হয়েছে। ওই চাঁদার মধ্যে ৫০০০ রিঙ্গিত ছিলো মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের অনলাইন পদ্ধতি এফ ডব্লিউ সিএমএস। যার ফী গ্রহণ করতেন সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা রুহুল আমিন স্বপন।

মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা পাচার নিয়ে দুদক ও সিআইডিতে মামলা চলমান। কিন্তু ৫ই আগষ্টের পর থেকে পলাতক থাকা সেই রুহুল আমিন স্বপন ও তার সহযোগীরা তাদের মালয়েশিয়ান পার্টনার দাতোশ্রী আমিন আবারও সিন্ডিকেট গড়তে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতোশ্রী আমিনের মালয়েশিয়ান আইটি কোম্পানী বেসটিনেট মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে বার  হাজার তিনশত কোটি চার লাখ টাকা। এ সিন্ডিকেটের দরুন চূড়ান্তভাবে বহির্গমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও  ১৭ হাজার কর্মীসহ মোট ৫০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি।

সিন্ডিকেটের অনিয়মের কারণে অসংখ্য কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার পরও চাকুরী, বেতন ও বাসস্থান না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফখরুল ইসলাম বলেন- এ সিন্ডিকেট নির্মূলে আসন্ন  জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আগের সমঝোতা স্মারকের দুটো ধারা বাদ দিতে হবে। যাতে অন্যান্য সোর্সিং দেশের ন্যায় মালয়শিয়ান সরকারের পরিবর্তে, মালয়শিয়ান নিয়োগকর্তা বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি পছন্দ করবে। কেননা মালয়েশিয়ান শ্রমবাজার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য নয়। বরং সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উম্মুক্ত করতে হবে এবং কম খরচে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত এফডব্লিউসিএমএস অনলাইন পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। সিন্ডিকেটের মূল হোতাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্মূলক শাস্তি দিতে হবে।

আবীর

×