ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

যেখানে কাজ সেখানেই বিয়ে, দুধ কিনতে না পেরে ২০ হাজার টাকায় ১৪ দিনের সন্তানকে বিক্রি করেন ৪র্থ স্ত্রী

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ২১ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫৩, ২১ এপ্রিল ২০২৫

যেখানে কাজ সেখানেই বিয়ে, দুধ কিনতে না পেরে ২০ হাজার টাকায় ১৪ দিনের সন্তানকে বিক্রি করেন ৪র্থ স্ত্রী

ছবিঃ সংগৃহীত

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেন কখনো ডিপ টিউবওয়েল মিস্ত্রি, আবার কখনো ইটভাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তবে পেশার চেয়ে তার বিয়ের সংখ্যাই এখন আলোচনার বিষয়। এ পর্যন্ত তিনি করেছেন ৫টি বিয়ে। কোন ঘরে সন্তান কেমন আছে, কেউ অভুক্ত কিনা—এ নিয়ে তার কোন খোঁজখবর নেই। যে এলাকাতেই কাজ পান, সেখানেই একটি করে বিয়ে করেন।

তার ৪র্থ স্ত্রী আশামনি চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু ক্লিনিকের খরচ, ওষুধ ও শিশুর দুধ কেনার মতো অর্থ না থাকায় ১৪ দিন বয়সেই তিনি নবজাতক কন্যাশিশু খাদিজাকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন আশাশুনির তেঁতুলিয়া গ্রামের নিঃসন্তান চা বিক্রেতা রবিউল-কাজল দম্পতির কাছে। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেই এই বিক্রয় সম্পন্ন হয়।

এই সন্তান বিক্রির ঘটনা সামনে আসে শুক্রবার ভোরে, যখন শামীম তার ৫ম স্ত্রী হোসনে আরাকে নিয়ে রাত যাপন করছিলেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর শুরু হয় তোলপাড়।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ায় জনৈক আফসার আলীর বাড়িতে ৫ম স্ত্রীকে নিয়ে ছিলেন শামীম। তার ৪র্থ স্ত্রী আশামনি খোঁজ নিতে সেখানে গেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় কথাকাটাকাটি ও মারামারি। স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও হোসনে আরা পালিয়ে যান। তখনই প্রকাশ পায় আশামনির সন্তান বিক্রির ঘটনা। রোববার বিকালে এই তথ্য সংবাদকর্মীদের জানায় এলাকাবাসী।

আশামনি বলেন, “আমি এই কাজ করেছি শুধুমাত্র আমার সন্তানকে সুস্থভাবে বাঁচানোর জন্য। ওষুধ, দুধ কেনার সামর্থ্য ছিল না।”

সন্তান গ্রহণকারী কাজল জানান, “আমরা কয়েকজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে শর্ত সাপেক্ষে টাকা দিয়ে শিশুটিকে গ্রহণ করেছি। শিশুটির টিকা কার্ড ও জন্মনিবন্ধনে পিতা-মাতার জায়গায় আমাদের নামই ব্যবহার করেছি। তার নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল।”

এ বিষয়ে আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ সামছুল আরেফিন জানান, “আমি চারদিন আগে এখানে যোগ দিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে এখনও কিছু জানি না।”

এদিকে স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা যায়, শামীমের বিয়ের ইতিহাস বেশ বিতর্কিত। ২০১৬ সালে তালা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামে প্রথম বিয়ে করেন, কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি। এরপর বদরতোলায় টিউবওয়েলের কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন—তাও টেকেনি। পরে চাচাতো বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করেন, যাকে বাড়িতে রেখে আবার ইটভাটায় কাজের সময় আশামনিকে বিয়ে করেন। এরপর বিলকিস ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র চলে যান।

আশামনি জানান, গর্ভবতী থাকা অবস্থায় শামীম মোবাইলে যোগাযোগ করলেও কোনো খোঁজখবর নেননি। এমনকি বদরতোলায় টিউবওয়েলের কাজ করতে গিয়েই সে হোসনে আরাকে বিয়ে করে।
 

মারিয়া

×