ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

যে বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের টানাটানি, তা পাওয়ার সুযোগ বাংলাদেশে!

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৫:৪৫, ২১ এপ্রিল ২০২৫

যে বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের টানাটানি, তা পাওয়ার সুযোগ বাংলাদেশে!

ছবিঃ সংগৃহীত

যে বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্ব চলছে, তা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে। এই খবর ছড়াতেই যেন নতুন করে ঘুরতে শুরু করেছে কূটনৈতিক চাকার গতি।

বিশ্বের দুই সুপারপাওয়ার—যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—এখন বাংলাদেশকে ঘিরেই কৌশল কষছে। বাংলাদেশ হয়ে উঠছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দেশ। আর ঠিক এই জায়গাতেই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ভারতের।

এখন বিশ্ব রাজনীতির পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের কারণেও বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পাচ্ছে না ভারত। বিশ্ব রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার মাপকাঠিতে যেন এশিয়ার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আজ বাংলাদেশ।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণ করছে চীন। আর এই খনিজের উপর নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি শিল্পে।

চুম্বক, স্মার্টফোন, যুদ্ধবিমান, রকেট—সবকিছুতেই দরকার এই ১৭টি মৌলের বিরল খনিজ। তাই যখন ট্রাম্প চীনের পণ্যে শুল্ক চাপান, চীন ঠিক করেছিল বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপরই মার্কিন টেক-ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু হয় হাহাকার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস-এ ১৩ই এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি চুম্বকসহ বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে প্রচুর মৌল জাহাজীকরণের অপেক্ষায় বন্দরে পড়ে আছে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, সামারিয়াম, ডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিস্প্রোসিয়াম, লিউটেনিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়ামের মতো প্রায় ১৭টি বিরল মৌলের অভাবে আমেরিকার প্রতিরক্ষা শিল্প বড় সংকটে পড়তে পারে।
আর এই কারণেই, যখন যুক্তরাষ্ট্রের মাথায় হাত, ঠিক তখনই বাংলাদেশে মিলল এক সম্ভাবনার ছলক।

বাংলাদেশে বিরল খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। দেশের গবেষকরা বলছেন, নদীর অববাহিকার বালু, জেগে ওঠা চড়, সৈকতের বালু এবং কয়লা খনি থেকে বিরল খনিজের সন্ধান মিলেছে।

প্রায় ২০ বছর ধরে খনিজ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। কয়েকটি গবেষণায় দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বিরল খনিজের সন্ধান পায় এই অধিদপ্তর।

গবেষকদের ধারণা, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির স্রোতধারার পললে তেজস্ক্রিয় মৌল ও বিরল ধাতু থাকতে পারে।
দেশের অভ্যন্তরে পাওয়া এসব বিরল খনিজ সংগ্রহের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও আছে।

জিএসবি সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে যমুনা নদীর বালু পরীক্ষা করে সেখানে থাকা আকরিকের মধ্যে বিরল মৃত্তিকা মৌলের সন্ধান পায় জিএসবির গবেষক দল।

জিএসবির অর্থনৈতিক ভূতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আলী আকবর বলেন, “২০১৬ সালে যমুনা নদীর বালুতে আমরা ভারী আকরিকের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিরল মৃত্তিকা মৌল পেয়েছি। এর সঙ্গে কিছু মাত্রায় লিথিয়াম, ইউরেনিয়াম এবং থরিয়ামও পেয়েছি।”

শুধু তাই নয়, দেশের প্রায় সবকটি নদীতেই এগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমনকি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে পাওয়া কয়লা ও ছাইয়েও বিরল খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে।

সাধারণত, প্রতি কেজি কয়লায় ১০০ মিলিগ্রাম বিরল খনিজ থাকলে তা অর্থনৈতিকভাবে উত্তোলনযোগ্য। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে পাওয়া কয়লার মধ্যে ২০০ মিলিগ্রাম বিরল খনিজ এবং কয়লা পোড়া ছাইয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিগ্রাম বিরল খনিজের উপস্থিতি রয়েছে, যা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি যদি বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য হয়, তাহলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে এশিয়ার পরবর্তী স্ট্র্যাটেজিক হাব।

এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি আজ হয়ে উঠতে পারে প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাবনাময় খনি। এই বিরল খনিজ শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বদলে দেবে না, বদলে দেবে পুরো এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র।

সূত্রঃ https://youtu.be/tB2ECozNF-A?si=29FJrG6muaMN64C6

ইমরান

আরো পড়ুন  

×