
.
এক ট্রাভেল এজেন্সি আরেক ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে এয়ার টিকিট বেচাকেনা করতে পারবে না। আবার ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার জন্য আবশ্যিকভাবে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আয়াটা) স্বীকৃতি ও সদস্যপদ নিতে হবে।
এ ধরনের বিধান রেখে দেশে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি খসড়া পরিপত্র তৈরি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ওই পরিপত্র তৈরি করা হচ্ছে।
তবে মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগে উদ্বিগ্ন এ খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। আপত্তি জানিয়ে তারা বলছেন, ওই পরিপত্র কার্যকর হলে দেশে হাজারো ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আয়াটার সদস্যরা একচেটিয়া ব্যবসা বা টিকিট বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে তুলবেন। গ্রাহক হয়রানি আরও বাড়বে। এ ছাড়া এ খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দেশে ট্রাভেল খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। এ সংগঠনের সদস্য ও উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে পাঁচ হাজার ৭৪৬টি লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি আছে। এর মধ্যে আয়াটার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এজেন্সি মাত্র ৯৭০টি। আবার এই ৯৭০টির মধ্যে ৩৫০টি এজেন্সির এমিরেটস এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সসহ বড় বড় উড়োজাহাজ সংস্থার টিকিট বিক্রির অনুমতি আছে। বাকি এজেন্সিগুলোর তা নেই।
কারণ, আয়াটার সদস্য হতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা অগ্রিম জমা দিতে হয়। আবার এয়ার অ্যারাবিয়া, ইন্ডিগো, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজের মতো এয়ারলাইন্সের টিকিট আয়াটায় পাওয়া যায় না। ফলে দেশের সব লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট সংগ্রহের জন্য ওই ৩৫০টি ট্রাভেল এজেন্সির ওপর নির্ভরশীল হবে। এমন অবস্থায় সরকারের ওই খসড়া পরিপত্র চূড়ান্ত হলে বাকি মাঝারি ও ছোট আকারের সব এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাবে।
তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খসড়া পরিপত্র তৈরির সময় ট্রাভেল এজেন্সির ওই দুটি বিষয় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ইতোমধ্যে এই পরিপত্র প্রকাশ না করতে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি।
দেশের ৫ হাজার ৭৪৬টি লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি ঢাকাসহ জেলা-উপজেলায় ব্যবসা পরিচালনা করে। ফলে একজন যাত্রী টিকিটের জন্য তাকে ঢাকা আসতে হয় না। চাইলে নিজের কাছের কোনো এজেন্সি থেকে টিকিট কাটতে পারেন। কিন্তু পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এ পরিপত্র চূড়ান্ত হলে টিকিট সংকট দেখা দেবে। ভোগান্তিতে পড়বেন যাত্রীরা। কারণ, সরকার নিবন্ধিত এজেন্সিগুলোর মধ্যে ৮৩ শতাংশের আয়াটার স্বীকৃতিপত্র নেই।
ট্রাভেল এজেন্সি মালিকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী ট্রাভেল ব্যবসায় এজেন্ট টু এজেন্ট (বি-টু-বি) মডেল প্রচলিত। সব দেশেই এক ট্রাভেল এজেন্সি আরেক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বেচাকেনা করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এই নিয়মের ব্যত্যয় হলে স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না।
ঢাকার শাহজাদপুরে ট্রাভেল এক্সপার্ট অ্যাভিয়েশন সার্ভিসেসের স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘একটি এজেন্সিকে আয়াটার সদস্যপদের জন্য সর্বনি¤œ ৩০ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টিসহ নানা কাগজপত্র সংগঠনটির বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার বরাবর জমা দিতে হয়। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে ৩০ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টিতে মাত্র তিন-চারটি এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটার অনুমতি পাওয়া যায়। তাই বাধ্য হয়ে আয়াটার বড় এজেন্সিগুলো থেকে উড়োজাহাজ টিকিট বিক্রি করতে হয়। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো কমিশন পায়। এখন আয়াটার সদস্যপদ বাধ্যতামূলক করলে বড় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। আর কম পুঁজির এজেন্সিগুলো টিকিট সংগ্রহের সুযোগ হারাবে। এ সুযোগে বিদেশী ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সুযোগ নেবে।’এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ বলেন, ‘ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনায় সম্প্রতি একটি খসড়া পরিপত্র তৈরি করেছে পর্যটন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রে যেসব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হবে। তাই বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। তারা পর্যালোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।’
প্যানেল