
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ আট বছরেও শেষ করা সম্ভব হয়নি কাজ, এ যেন এক আজব সেতু। কয়েক দফায় পরিবর্তন হয়েছে ঠিকাদার, সব শেষ কাজ ফেলে রেখেই পালিয়েছে ঠিকাদার। এভাবেই দিনের পর দিন অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় কীর্তিনাশা নদীর উপর ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণকাজ।
‘এই রাস্তা সরকার কোন জনম করবে? আমরা তো চাই খালি ব্রিজ কইরা দেক, আমরা তো সরকারের কাছে টাকা পয়সা চাই না,’ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এক স্থানীয়। ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চলছে নদী পারাপার, পা পিছলে নদীতে পড়ে যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে প্রাণহানির মত ঘটনা।
এমন ভোগান্তি মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনের ক্ষেত্রেও। একটিমাত্র সেতু নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এমন দুর্ভোগ, যা নাকাল করেছে এই অঞ্চলবাসীকে। ভুক্তভোগী এক স্থানীয় জানান, নৌকা দিয়ে নদী পার হতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। তিনি নৌকায় উঠতে গিয়ে চারদিন মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে গেছেন।
ভোগান্তির যেন শেষ নেই বৃদ্ধ-নারী-শিশু-স্কুল শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষের। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন তারা। বর্ষার মৌসুমে অনেক সময় আবার নৌকা পাওয়া যায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এক স্কুলছাত্রী। তিনি বলেন, ‘পুরান ব্রিজটা দিয়া আমরা তাড়াতাড়ি যাইতে পারতাম, ব্রিজটা ভাঙার পরে ট্রলারে যাতায়াত করতে অনেক ভয় করে বা কিছু ট্রলার ডুইবা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
পুরনো ব্রিজ ভেঙে ফেলায় আর নতুন ব্রিজের নির্মাণকাজে ধীরগতিতে ভুক্তভোগী ঢাকাগামী বাসযাত্রীরাও। শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ঢাকাগামী এক বাসের চালক বলেন, ‘পুরান ব্রিজটা ভাঙার কারণে আমরা যেহেতু ঢুকতে পারতেছি না, জনগণের অনেক কষ্ট হইতেছে।
ঢাকা থেকে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের মানুষের সড়ক পথে যোগাযোগ সহজতর করতে ১৯৯৭ সালে কীর্তিনাশা নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছিল একটি সেতু। তবে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে ২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২২ মিটার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কিছুটা কাজ শেষ করে অপরাগতা প্রকাশ করলে পুনরায় ২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা চুক্তিমূল্য ধরে নতুন করে দায়িত্ব দেয় আরেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। তবে সেই প্রতিষ্ঠান ৫ আগস্টের পরে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে সেতুটির ৬০ ভাগ কাজ করে পালিয়ে যায়।
১৫ বছর ধরে নির্মাণকাজ চলতে থাকা এই সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি স্থানীয়দের। এক স্থানীয় বলেন, ‘আমরা যারা সাধারণ লোক আছি, এই ভোগান্ত থেকে মুক্তি চাচ্ছি এবং দ্রুত কাজটা নির্মাণ করার জন্য আমি বর্তমান যে সরকার প্রধান, ড. ইউনূসের কাছে বিনীতভাবে কামনা করছি।’
সূত্র: https://www.facebook.com/share/v/16KLfoKHAN/
রাকিব