ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে চিকিৎসক নার্সরা অসহায় সব টেস্টের ব্যবস্থা থাকলেও রোগীদের পাঠানো হয় বাইরে

রোগী ও দর্শনার্থীদের চাপে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

রোগী ও দর্শনার্থীদের চাপে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা

.

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী ও দর্শনার্থীদের অস্বাভাবিক চাপে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। ওয়ার্ডের ভেতরে-বাইরে ও বারান্দা-করিডর থেকে মেঝে, সিঁড়ি কোথাও পা ফেলার জায়গা ফাঁকা নেই! এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিক্যালে গড়ে প্রতিদিন ৩০০০ থেকে ৩৫০০ রোগী ভর্তি থাকছে। এসব রোগীর সঙ্গে গড়ে ৩ জন স্বজন অবস্থান করছেন। স্বজনেরা জানান, রোগীর চাপে প্রত্যাশিত সেবা মিলছে না। রয়েছে ওষুধ, স্যালাইন ও জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন পয়েন্টের সংকট। আছে সংঘবদ্ধ দালাল, ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধি আর আয়া, ট্রলিবয়দের দৌরাত্ম্য। হাসপাতালে বেশিরভাগ টেস্টের ব্যবস্থা থাকার পরও এক শ্রেণির চিকিৎসক কমিশনের লোভে পরীক্ষার জন্য হতদরিদ্র অসহায় রোগীদের বাইরের ল্যাব ও হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। রোগীদের বরাদ্দের খাবার নিয়েও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। হাসপাতালে বিভিন্ন টেস্টের সময় নির্ধারিত ফিয়ের সঙ্গে রোগীদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জের নামে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা।
ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, হাসপাতালের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অব্যবস্থাপনার উদ্ভব। সেবা পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে রোগীরা। চাপ কমাতে আলাদা জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এত বিপুলসংখ্যক রোগীর চাপ সামাল ও সেবা দেওয়ার সক্ষমতা নেই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স কর্মচারীদের। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর গ্রামের কৃষক হযরত আলী (৪৫) জানান, হাসপাতালে শতভাগ ওষুধ প্রদানের সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকলেও তা মিলছে না। হাসপাতালের বাইরের ফার্মেসি থেকে রোগীর ওষুধ আনার জন্য অনেক রোগীর একাধিক লোকের প্রয়োজন পড়ছে। এর বাইরে রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বাথরুমে আনা নেওয়ার জন্যও প্রয়োজন পড়ছে বাড়তি লোকের। এসব নানা কারণে বাধ্য হয়েই প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে ৪/৫ জন করে অতিরিক্ত লোকের প্রয়োজন পড়ছে। হাসপাতাল থেকে শতভাগ ওষুধ প্রদান ও পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে বাড়তি লোক এমনিতেই কমে আসবে বলে মনে করেন রোগীর স্বজনেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্বজনদের। অথচ কদিন আগেও সব কিছু ছিল নিয়ন্ত্রণে ও শৃঙ্খলায়।

সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা  উপজেলার বাদশাগঞ্জ গ্রামের আব্দুল আলীম (৫৫) জানান, সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহম্মেদ এর মেয়াদে হাসপাতালে দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণসহ শতভাগ ওষুধ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থাই ছিল। অথচ এখন স্যালাইনও অনেক সময় বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স কর্মচারীদের আন্তরিকতার পরও রোগীর চাপ ও দর্শনার্থীদের ভিড়ের কারণে সেবাদান বিঘ্নিত হচ্ছে উল্লেখ করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল বাতেন জানান, আশপাশের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আরও সুবিধা বাড়িয়ে এই চাপ কমানো সম্ভব। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইমরুল হাসান রবী জানান, মেঝেতে থাকা রোগী ডিঙ্গিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। এটি একজন রোগীর জন্য অমর্যাদাকর। চিকিৎসকের জন্যও বিব্রতকর। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস জানান, প্রয়োজনীয় শয্যা সংকট ও লোকবলের অভাবে সেবাদান বিঘ্নিত হচ্ছে। রোগীর চাপ বিবেচনায় হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টার মাসকান্দায় সরিয়ে এখানে হাসপাতালের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করে সমস্যার সমাধানের কথা ভাবছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ২০১৩ সালে পাঁচশ’ শয্যা থেকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে। হাসপাতালের হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার, ওয়ানস্টপ সার্ভিসে প্রায় ৩শ’ ও জরুরি বিভাগে আরও ২শ’ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো কার্যক্ষমসহ লোকবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিসকে আরও কার্যকর করা গেলে চলমান সংকট অনেকটাই লাঘব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্যানেল

×