
.
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনটি বাধ্যতামূলক দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনটি ‘ম্যান্ডেটরি’ দাবি পূরণ হলেই আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে ডা. শফিকুর রহমান এ কথা বলেন।
ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য সফরের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, সফরে তারা আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে জানতে চেয়েছেন। এই নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে? আমরা বলেছি, অনেক ত্যাগ এবং চেষ্টার বিনিময়ে যে পরিবেশ এসেছে, সেই পরিবেশ তিনটি ম্যান্ডেটরি জিনিস দাবি করছে। প্রথম হলো, দৃশ্যমান, গ্রহণযোগ্য, মৌলিক সংস্কার। কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গা আমরা মেনশন (উল্লেখ) করেছি, যা এর আগে আমরা জাতির সামনে পেশ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব কমিশনগুলোর কাছে জমা দিয়েছি। আমরা বলেছি, সংস্কারগুলো সাধন না করে যেই নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন গণতন্ত্রের কোনো ভিত্তি রচনা করতে পারবে না। বরং অতীতের যেসব নির্বাচন দেশ ও জাতির কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি, সে রকম হয়তো আরেকটা খারাপ নির্বাচন হবে। আমরা ওই নির্বাচন চাই না।
জামায়াত আমির বলেন, হাজার প্রাণের বিনিময়ে, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে, আহত হওয়ার বিনিময়ে দেশে এই পরিবর্তন এসেছে। তাই অবশ্যই সংস্কার সাধন করতেই হবে। এই সংস্কার কারা করবে? সংস্কারের প্রধান অংশীজন হলো রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলো যত তাড়াতাড়ি ও আন্তরিকতার সঙ্গে সংস্কারে সহযোগিতা করবে, তত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। সংস্কার যদি না হয়, তাহলে সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির বিষয়ে দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণ না হয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে পড়বে। আর তার দায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বাস্তবতার কাতারে এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংস্কারে সহযোগিতা করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হলো, যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, এই খুনের দায় যাদের, তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃশ্যমান বিচার এই জাতিকে দেখাতে হবে। যাতে খুনিদের বিচারের বিষয়ে জাতির আস্থা ফিরে আসে।
তৃতীয় দাবির বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরকে সম্মান করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। জিতে গেলে নির্বাচন সুষ্ঠু, আর হেরে গেলে দুষ্ট- এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে সেই নির্বাচনটা এমন হতে হবে, যে নির্বাচন নিয়ে কেউ সহজে প্রশ্ন তুলতে না পারে। এ জন্য অনেক ডায়ালগ ও এনগেজমেন্টের (আলাপ-আলোচনা ও সম্পৃক্ততা) প্রয়োজন। এটি সরকারের তরফ থেকে হতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে হতে পারে, সিভিল সোসাইটি (সুশীল সমাজ) থেকেও হতে পারে। এটা যখন মাল্টিপল (বহুপক্ষীয়) জায়গা থেকে হবে, তখন একটা পরিবেশ তৈরি হবে। তাঁরা সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
জামায়াতের আমির বলেন, তারা (বিদেশীরা) নির্বাচনের সময় জানতে চেয়েছেন। তারা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে বারবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারা মনে করেন, আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির জন্য, সংস্কারের জন্য, বিচারের জন্য এই সময়টা গ্রহণযোগ্য। এই সময়ের সীমা যাতে অতিক্রম করে না যায়, তারা সেই বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সাক্ষাতে তারা রোজার আগে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে বলেছেন। তিনি আবার বলছেন, এটা তখনই হতে পারে, যখন এই শর্তগুলো পূরণ হতে পারে।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘শর্ত পূরণ ছাড়া মার্চ, ফেব্রুয়ারি- কোনো কিছুই ঠিক থাকবে কি না, আল্লাহই ভালো বলতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, অন্তর্ভুক্তি নির্বাচন নিয়ে ইইউতে কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিষয়েও তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা তাদের বলেছি আমাদের দেশে এই কেবলমাত্র একটা গণহত্যা হয়েছে। শহীদের মা-শিশুরা এখনো কান্নাকাটি করছে। ছেলেরা কান্নাকাটি করছে। আহতরা কেউ কেউ এখনো হাসপাতালের বেডে আছে। আমরা জাতি হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের যে করণীয়, সেটাও পুরোপুরি করতে পারি নাই। জুলাই-আগস্ট এ সময়টা সরকার গোটা জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা পক্ষের ছিল না। এটা ছিল জনতার আন্দোলন। নেতৃত্বে ছিল আমাদের যুবক-যুবতীরা। কিন্তু আন্দোলনে সম্পৃক্ততা ছিল সকলের। দ্বিতীয়ত, তারা অপার সুযোগ পেয়েছিলেন। তারা একটানা তিনটা নির্বাচন তাদের অধীনে করেছেন। সেই নির্বাচনগুলোকে তারা নির্বাচন রাখলেন না কেন? তারা তো নির্বাচনের জান কবচ করেছেন এবং জনগণ বলেন, তাদের দলের ভোটাররাও নির্বাচনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে তারাও নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। এ রকম একটি দলকে জনগণ গ্রহণ করবে কি না? আওয়ামী লীগের সেই মানসিকতার কী পরিবর্তন হয়েছে? সেটা বিশাল প্রশ্ন। এ কথা বলার পর তারা আর কিছু বলেননি।
দলের নিবন্ধন প্রশ্নে আমিরে জামায়াত বলেন, কেন আমরা নিবন্ধন ফিরে পাব না? নিবন্ধন তো অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা অবশ্যই নিবন্ধন ফিরে পাব, ইনশা আল্লাহ। আমাদের ন্যায়সংগত অধিকার ফিরে পাব।
মিট দ্য প্রেসে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল ও অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।
প্যানেল