
..
এনসিপির দাবি তাদের দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। তারা তাদের রাজনৈতিক দাবি কীভাবে আদায় করবে, কীভাবে নিষ্পত্তি করবে, এটা এনসিপি বুঝবে। এর সঙ্গে সরকারের নির্বাচন সংক্রান্ত যে ঘোষণা, সেটার ব্যত্যয় ঘটার কোনো কারণ আমি দেখছি না বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা জানান। পাশাপাশি ব্যাংকের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ পাস করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। একইসঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন অধ্যাদেশ নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যাদেশে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৯০ শতাংশ রাখা হয়েছে ব্যাংকের সুবিধাভোগীর জন্য। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এতে নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি সরকারের, তাতে প্রভাব পড়বে কি না জানতে চান সাংবাদিকরা। রিজওয়ানা হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সেভাবে সরকারের কথাবার্তা বলার সুযোগ নেই। সরকার বলবে নির্বাচন কখন হবে, সেই অনুযায়ী তারা নিশ্চয়ই প্রস্তুতি নেবে। আর এনসিপি’র এটা রাজনৈতিক অবস্থান। আমরা আসলে আপনার মুখ থেকেই শুনলাম সকাল থেকে তো কেবিনেট মিটিংয়েই ছিলাম। আমি মনে করি না এই দাবি কেবিনেটে আলোচনার কোনো বিষয়।
অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে কমিটি হবে
অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা বলেন, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। প্রাথমিক কাজগুলো হয়েছে, এখন অর্থনৈতিক অপরাধে যারা জড়িত ছিল, তাদের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করার জন্য আমরা আলাদা একটি কমিটি গঠন করছি।
তিনি বলেন, সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ যেটা আছে, ১৯৭৪ সালের একটা আইন ছিল। সেই আইনের অতিরিক্ত হিসেবে, সম্পূরক হিসেবে এই অধ্যাদেশ আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে অডিটের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কিছু মান আছে। সেই মান এবং চর্চা যেন বাংলাদেশের কম্পট্রলার এবং অডিটর জেনারেল মেনে চলেন। যাতে করে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যয় আমরা নিশ্চিত করতে পারি, স্বচ্ছতা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, একটি শিল্পগোষ্ঠী কীভাবে কয়েকটি ব্যাংকে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, কত টাকা এ দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই জিনিসটি ভবিষ্যতে যাতে না হতে পারে, সেজন্য করপোরেট সেক্টরে, ব্যাংক সেক্টরে শৃঙ্খলা আনার জন্য, জবাবদিহির জন্য আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ আমরা অনুমোদন দিয়েছি। আমরা আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনায় আমাদের সাধারণ আমানতকারীদের আর পড়তে না হয়, সেজন্য এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা কীভাবে আনা যায় বাংলাদেশ ব্যাংককে কতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হবে, সে কোন পর্যায়ে গিয়ে হস্তক্ষেপ করবে, এগুলো আইনে স্পষ্ট ছিল না। এখন এগুলো স্পষ্ট করা হলো।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটা সুপারিশ ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই অধ্যাদেশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন রাজস্ব সংগ্রহ এবং রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি করার জন্য দুইটি আলাদা কর্তৃপক্ষ হবে। সেই মোতাবেক রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশে আমরা দুইটি কাজকে আলাদা করছি।
ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ পাস
ব্যাংকের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ পাস করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা বলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সংশোধনী হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়বে। ফলে বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে অর্থপাচার ও লুটপাটের যে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে তা বন্ধ করা সম্ভব হবে।
গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা কমল
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন অধ্যাদেশ নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যাদেশে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৯০ শতাংশ রাখা হয়েছে ব্যাংকের সুবিধাভোগীর জন্য। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এখানে গ্রামীণ ব্যাংক আগে যখন কাজ করত, একটা মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করত। সেই মূল্যবোধ হচ্ছে যারা গ্রামীণ ব্যাংকের সুবিধাভোগী, তাদেরই অংশগ্রহণ থাকবে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে। কিন্তু আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদকে রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করা হয়েছিল এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানায় তার যে দর্শন ছিল যে ঋণ নেবে তার হাতেই সুবিধা থাকবে। সেখান থেকে সরিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে নিয়ে আসা হয়। আজকে যে অধ্যাদেশ সংশোধন করা হলো, তার মাধ্যমে আগে গ্রামীণ ব্যাংক ভূমিহীনদের জন্য কাজ করত, এখন বিত্তহীনদের একটি সংজ্ঞা সংযোজন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পরিসর থেকে বেরিয়ে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অধ্যাদেশে বোর্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যারা এই ব্যাংকের সুবিধাভোগী, তাদের মধ্যে থেকে ৯ জন নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এই ৯ জনের মধ্যে থেকে আবার ৩ জন মনোনীত হবেন এবং তাদের মধ্যে থেকে একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে পরিশোধিত মূলধন আগে ছিল সরকারের ২৫ শতাংশ, আর সুবিধাভোগীদের ৭৫ শতাংশ। এখন হয়ে গেছে ১০ শতাংশ এবং ৯০ শতাংশ। এ ছাড়া ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট ২০১৫’ অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংককে জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করার একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্যানেল