ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মনোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

.

কেমন কেটেছে শহর ঢাকার বিগত সপ্তাহটি? উত্তরে বলা যায়, বর্ণিল রূপ পেয়েছিল রাজধানী। বাঙালি জাতিসত্তার স্বকীয়তার সুন্দরতম প্রকাশ ঘটেছে এই নগরীতে। সকলে মিলে মেতে উঠেছে সর্বজনীন এক উৎসবে। রাজপথে বয়ে গেছে রঙের ফোয়ারা। আনন্দে আত্মহারা হয়েছে উচাটন নাগরিক মন। আর এই অপার আনন্দের উৎসটি ছিল নববর্ষ উদ্যাপন। সেই সুবাদে নতুন বাংলা বছর আবাহনে পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছে রাজধানীর নানা প্রান্তের মানুষ। সাত-সকালে কেউ বা  ছুটে গিয়েছেন সবুজ শ্যামলে আবৃত রমনা বটমূলে। উপভোগ করেছেন ছায়ানটের প্রভাতী বর্ষবরণের অনুষ্ঠানটি। নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে ভালোলাগার অনুভবে তন্ময় হয়ে শুনেছেন গান বা পাঠের পরিবেশনাসমূহ। অংশ নিয়েছেন নববর্ষের রঙ্গিলা আয়োজন চারুকলা অনুষদের আনন্দ শোভাযাত্রায়। এখানেই শেষ নয়। সকালের পর্ব পেরিয়ে বিকেল থেকে উৎসব উদ্্যাপনকারীদের পদচারণায় মুখর হয়েছে মানিক মিয়া এভিনিউ। এখানে কনসার্টের  সমান্তরালে অনুষ্ঠিত হয়েছে নয়নজুড়ানো ড্রোন শো। আলোর খেলায় দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদ, পানির বোতল হাতে প্রতীকী মুগ্ধ কিংবা পায়রার খাঁচা ভাঙাসহ বিভিন্ন থিম। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি, শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ষবরণের বৈচিত্র্যময় একগুচ্ছ অনুষ্ঠান। এসব আয়োজনে ধর্ম-বর্ণের বিভাজনকে পাশ কাটিয়ে সম্প্রীতির প্রগাঢ় আহ্বানে আলোড়িত হয়েছে মনপ্রাণ।  
আক্ষরিক অর্থে নববর্ষ শেষ হলেও রয়ে গেছে  উৎসবের রেশ। তাই তো নগরবাসীকে কাছে টানছে বাংলা একাডেমি আঙিনায় চলমান বৈশাখী মেলা। নজরুল মঞ্চের চারপাশজুড়ে হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পের সম্মিলনে সেজেছে এই মেলা। এখানে মিলছে  দেশী কাঁচামালে  দেশী কারিগরদের তৈরি গৃহসজ্জা থেকে পরিধেয় বস্ত্র কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসম্ভার।  দেখা মিলছে কাঠের কাজ থেকে বাঁশ ও বেতের কাজসহ নানা ধাতব পদার্থে গড়া গহনা। রয়েছে চামড়াজাত পণ্য থেকে মৃৎশিল্পের সাক্ষ্যবহ টেপা পুতুল। সব মিলিয়ে  নিজস্বতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় সেসব পণ্য। মেশিনের পরিবর্তে  হাতের তৈরি রকমারি পণ্যসমূহ হাতছানি দিচ্ছে আপন সংস্কৃতির অনুরাগী ক্রেতাদের। কারুকাজ রাজশাহী নামের স্টলে মিলছে রংপুরের শতরঞ্জি থেকে সূচিশিল্পের স্মারক রাজশাহীর নকশিকাঁথা। আছে ব্লক-বাটিকের সুদৃশ্য চাদর থেকে পাটের  তৈরি নক্সাদার ব্যাগ, ফ্লোরম্যাটসহ নানা কিছু। বেকি নামের বিপণি বিতানে ৪০০ থেকে হাজার টাকায় মিলছে পাটজাত হাল ফ্যাশনের জুতা। কাজী ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাচ্ছে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি. ট্রে, ফুলের টব, গহনার বাক্সসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। তাঁতশিল্পের সমাহার ঘটেছে নকশি বাংলা নামের স্টলে। রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া মেয়েদের থ্রি পিস। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সুমাইয়া
জামদানি হাউসে শোভা পাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি। বাহারি কারুকাজ  ও নক্সার জামদানি শাড়িতে ঠাঁই পেয়েছে স্টলটিতে। বৃহস্পতিবার  বিকেলে দোকানটিতে অবস্থানরত জামদানি কারিগর মোখলেছুর রহমান এক ক্রেতাকে দেখাচ্ছিলেন কারুকাজনির্ভর নানা নামের জামদানি। এই কারিগরের তথ্য থেকে বিছা পাড়, বেল পাতা পাড়, পাংকাশ জাল, মাছি বোটা, ফাটা জুঁই, আঙুল পাড়সহ রকম ভেদে জামদানি শাড়ির নানা নাম জানা হয়। ১ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব শাড়ি। পাশের স্টল রাজন জামদানি হাউসে ১০০ কাউন্টের সুতায় তৈরি সূক্ষ্ম কারুকাজ ও নক্সার লাখ টাকার জামদানির দেখা মেলে।  মেলার বিভিন্ন স্টলে ছোটাছুটি করছিলেন ফারহানা আমিন।
আলাপচারিতায় এই কর্মজীবী নারী বলেন, এই বৈশাখী মেলার সূত্র ধরে আমার নববর্ষ উদ্যাপন এখনো চলমান রয়েছে। নিজের জন্য কেনার পাশাপাশি প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার মতো অনেক কিছু আছে এখানে। এ ছাড়া  এ মেলায় এমন অনেক পণ্য  আছে যেগুলো বাইরে পাওয়া যায় না। ভিন্নধর্মী নক্সা ও বৈশিষ্ট্যময় পণ্যের টানে এখানে এসেছি।       
সব মিলিয়ে ৯৮টি বিপণি বিতান রয়েছে বৈশাখী  মেলায়। আগামী রবিবার পর্যন্ত চলমান এই মেলা সকাল দশটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমি।    

প্যানেল

×