ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

জুলাই -আগষ্ট গণহত্যা  শেখ হাসিনার অপরাধের নিউক্লিয়াস  ৪ মামলার অগ্রগতি চুড়ান্ত পর্যায়ে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৭ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১১:২৬, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

জুলাই -আগষ্ট গণহত্যা  শেখ হাসিনার অপরাধের নিউক্লিয়াস  ৪ মামলার অগ্রগতি চুড়ান্ত পর্যায়ে

ছবি : সংগৃহীত

জুলাই -আগষ্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জড়িত থাকার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে । এ ছাড়া আরো তিনটি মামলার তদন্ত  কাজও শেষের দিকে । আশুলিয়া লাশ পোড়ানো, চানখারপুল হত্যাকান্ড, রামপুরা কার্নিশে ঝুলে থাকাকে গুলি ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার তদন্ত   শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এই চারটি মামলার তদন্ত  প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সুত্রে এ খবর জানা গেছে।

 

 

 
চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান , জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা মাস্টারমাইন্ড, সুপিরিয়র কমান্ড, যাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং যাদের কারণে রাষ্ট্র এমন হয়েছে, তাদের আগে বিচার করতে চাই। ভিকটিমদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় অনুষ্টানে চীফ প্রসিকিউটর এ কথা বলেছেন।  এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ, মামলার তদন্ত   ও আসামিদের গ্রেপ্তারের হালনাগাদ তথ্যের এক প্রতিবেদন তুলে ধরেন তিনি।

 

 


অন্যদিকে প্রসিকিউটর  গাজী মোনাওয়ার  হুসাইন তামীম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা, ওবায়দুল  কাদেরসহ আওয়ামীলীগ লীগ নেতাদের এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা করা মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মামলা। এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং অপরাধ সংগঠনে তাদের ভূমিকা তদন্ত  করা হচ্ছে, যা আইনের ভাষায় ‘সুপেরিয়রর কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’ হিসেবে পরিচিত।  পাশাপাশি, জুলাই-আগস্টের ঘটনার বিভিন্ন স্থানের ওপর ভিত্তি করে কিছু মামলার তদন্ত  চলছে। এর মধ্যে আশুলিয়া , রামপুরা এবং চানখারপুলসহ বেশ  কয়েকটি  স্থানের মামলা উল্লেখ যোগ্য।

 

 


তিনি আরো বলেন , সুপেরিয়র রেসপন্সিবিলিটির মামলায় যারা গ্রেপ্তার বা পলাতক রয়েছেন , তাদের অনেকেই এরই মধ্যে ঘটনাস্থল কেন্দ্রিক মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। আর যেসব মামলায় নৃশংসতা বেশি, সেগুলোতে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এ কারণে অন্যান্য মামলার তদন্ত কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। তবে এর মানে এ নয় যে মামলাগুলো থেমে আছে। প্রতিটি মামলার জন্য আলাদা তদন্তকারী  কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে  এবং তারা পৃথকভাবে তদন্ত  পরিচালনা করছেন। শেখ হাসিনার মামলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার  কারণ হিসেবে তিনি জানান, শেখ হাসিনা সব অপরাধের নিউক্লিয়াস (কেন্দ্রবিন্দু)। তার নির্দেশেই সব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।  তার বিরুদ্ধে তদন্ত চুড়ান্ত  হলে, সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া  সম্ভব হবে। 

 

 


ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন  সুত্রে জানা গেছে , পতিত সরকারের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। থানা, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দলিলপত্র পুড়িয়ে বা লুকিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তদন্ত  কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। চিফ প্রসিকিউটর জুলাই আন্দোলন নির্মূলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত  কার্যক্রম বিষয়ে বলেন, ‘প্রশাসনের অভ্যন্তরে   বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতি অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অসহযোগিতা সাক্ষ্যপ্রমাণাদি গ্রহণের প্রক্রিয়াকে সময়সাপেক্ষ করে তোলে।’

 

 


‘বিগত সরকার পতনের পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করা হয়েছে। তদন্তকারী  কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউশন টিমের ওপর সরাসরি প্রাণঘাতী বোমা হামলার চেষ্টা/ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তদন্ত  কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করছে। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বা মিসইনফরমেশন ছড়ানো, তদন্তকারী  কর্মকর্তা বা প্রসিকিউটরদের নামে মিথ্যা অপবাদ প্রদান, বিদেশি লবিস্ট ফার্ম এবং আইনজীবীদের মাধ্যমে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর  বক্তব্য প্রদানে অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।

 


চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছে। থানা, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দলিলপত্রাদি পুড়িয়ে বা লুকিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক স্থাপনার আকার আকৃতি, দেয়াল ইত্যাদি ভেঙ্গে এবং বিকৃত করে প্রমাণ লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তদন্ত  কর্মকর্তাগণ এগুলো ট্রেস করে পুনরুদ্ধার করতে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
ট্রাইব্যুনালে মামলার পরিসংখ্যান নিয়ে বলা হয়, মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি মিস কেইসে ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ৩৯টি মামলার তদন্ত  চলছে।  অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শ্রেনীবিন্যাসের মধ্যে  বেসামরিক ৭০,পুলিশ ৬২,সামরিক ৯জন।  বেসামরিক ৭০জন রয়েছে। আন্তর্জাতিক  অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ একটি বিশেষায়িত সংস্থা। সমন্বয়ক ,সহ সমন্বয়ক সহ তদন্ত সংস্থার মোট তদন্তকারী কর্মকর্তার বর্তমান সংখ্যা ২৪ জন। তদন্ত  সংস্থার সকল সদস্যই পুলিশ বাহিনী থেকে প্রেষণে বা চুক্তিভিত্তিক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। পুণগঠিত তদন্ত সংস্থা দয়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর । এ ছাড়া প্রসিকিউশন টিমে চিফ প্রসিকিউটর সহ মোট ১৭ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। আইনের বিধান অনুসারে প্রসিউিটরগণ তদন্তকারী  কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন।

আঁখি

আরো পড়ুন  

×