
ছবি: সংগৃহীত।
দেশের একটি বেসরকারি গণমাধ্যমের টকশোতে আলোচনার একপর্যায়ে উপস্থাপিকা ড. মোশরেকা অদিতিকে প্রশ্ন করেন, “আপনি তো পিএইচডি করেছেন বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে। কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষা তো আমরা দেখলাম না! শুনলাম, বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্নভাবে পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন এবং গত ১০ বছর ধরে তা উপলব্ধি করছিলেন। তাহলে যারা সবচেয়ে আগে বুঝবেন, সেই বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদের ভাষাটা হারিয়ে গেল কেন? আদৌ কি বুদ্ধিজীবী এখনো আছেন?”
জবাবে ড. অদিতি বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা তো সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই আলাপটা আমি আসলে অনেক প্রোগ্রামেই করেছি। সেটা হলো—যখন ডমিনেন্ট ক্লাস ক্ষমতায় থাকে, তখন সে তার মতাদর্শটাই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আর সে সময় বুদ্ধিজীবীদের ‘কিনে ফেলা’ হয়। গত ১৬ বছরে সেটাই হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকান—কয়টা প্রোগ্রামের শিক্ষকরা কথা বলেন? কয়জনকে আপনি বলতে পারেন, যিনি সব ইস্যুতে কথা বলেন? তাহলে বলা যায়, বুদ্ধিজীবীর প্রবণতা থাকতে পারে, কিন্তু বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমি তাদের সার্টিফিকেটটা আর দিতে পারছি না। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের ওপরও বর্তায়।
আমি বরাবরই বলে আসছি—দীর্ঘ ১৬ বছর চুপ করে থাকতে থাকতে একটা জড়তা তৈরি হয়, একটা জারড (জমাট বাঁধা) মানসিকতা তৈরি হয়। তার ওপর আবার ভয়ভীতিও আছে। কেউ যদি কথা বলেন, দাঁড়ান—তাকে একপ্রকার ‘ভিকটিম’ করা হয়েছে। তিনি নজরে এসেছেন, সারভেইলেন্সে এসেছেন।
আমার মতে, বুদ্ধিজীবীদের আপনি তাদের পলিটিক্যাল বিহেভিয়ার (রাজনৈতিক আচরণ) দিয়েই মাপতে পারবেন। কিন্তু পরিবর্তনটা কোথা থেকে আসবে? বুদ্ধিজীবীদের কাজ কী? তাদের কাজ হচ্ছে ‘ফ্যাসিলিটেট’ করা, ‘অ্যাকোমোডেট’ করা। কিন্তু সবচেয়ে বড় কাজ—যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন—তা হলো ‘এক্সহিউম দ্য ট্রুথ’। সত্যকে তুলে আনা, তা খুঁড়ে আনা।
এই কাজটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একজন বুদ্ধিজীবীকেও তো আয় করতে হয়। তারও সংসার আছে, বাজারে যেতে হয়, টিকে থাকতে হয়। কিন্তু আমরা এমন একটা সমাজ বা রাষ্ট্র তৈরি করতে পারিনি, যেখানে বুদ্ধিজীবীরা মুক্তভাবে, সত্যের পক্ষে, শিল্প-সংস্কৃতি, রেজিস্টেন্স ও অথরিটি নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন।
এই অঞ্চলে—আমাদের দেশেও—আমরা সেই কাঠামো তৈরি করতে পারিনি। তাই তারা পরাস্ত হয়েছেন, ব্যবহৃত হয়েছেন। তবুও, একটা জায়গা আছে—যেখানে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার দায়টাও বুদ্ধিজীবী হওয়ার সঙ্গেই জড়িত।”
নুসরাত