
.
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোসহ অন্যান্য মুদ্রণ কাজে কাগজ লাগবে দুই লাখ ৩০ হাজার রিম। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৫ কোটি টাকার বেশি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় (বিজি প্রেস) থেকে এই চাহিদা দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বিজি প্রেসের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক বৈঠক হয়েছে। তারা বলেছে, ব্যালট পেপারসহ সকল মুদ্রণ কাজ সম্পন্ন করতে তিন মাসের মতো সময় লাগবে। আমরা বলেছি, চার মাস সময় নেন। এক্ষেত্রে তারা সবকিছু হিসাব করে পরবর্তী বৈঠকে জানাবে বলেও জানান আখতার আহমেদ।
কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ডিসেম্বরকে টার্গেট করেই কাগজ কেনা হবে। এক্ষেত্রে তফসিলের আগেই কাগজ কেনা সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। কেননা, তফসিলের আগেই বেশকিছু মুদ্রণ সম্পন্ন করতে হয়।
আলোচনার পর ইসি সচিব তাদের চার মাস সময় দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আগামী মে মাস থেকেই কাগজ কেনার কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী সামগ্রীর মুদ্রণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করার অংশ হিসেবেই বৈঠকটি হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২১ প্রকার ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, পাঁচ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা ইত্যাদি মুদ্রণ কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সংবলিত হয়ে থাকে। এ কারণে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পেপার স্বল্প সময়ের মধ্যে মুদ্রণপূর্বক মাঠ কার্যালয়ে বিতরণ করতে হবে। অন্যান্য ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, আচরণ বিধিমালা, প্রতীকের পোস্টার, ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা ইত্যাদি সম্ভাব্য সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মুদ্রণপূর্বক সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচনে ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য মুদ্রণ সামগ্রী মুদ্রণের জন্য কী পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন হবে তার হিসাব জানার জন্য গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস, তেজগাঁও এবং কাগজের বর্তমান মজুত সম্পর্কে জানার জন্য বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস, তেজগাঁও, ঢাকা-কে গত ১৩ জানুয়ারি পত্র পাঠানো হয়। এ প্রেক্ষিতে গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস, তেজগাঁও ও বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস, তেজগাঁও, ঢাকা নির্বাচন কমিশনে সচিবালয়ের সংরক্ষিত কাগজের বিস্তারিত হিসাব পাঠায়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য নির্বাচন উপলক্ষে এক লাখ ৬১ হাজার ৭৪ রিম কাগজ কেনা হয়েছিল। আগামীতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে দুই লাখ ৩০ হাজার রিম কাগজের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার রিম কাগজ মজুত রয়েছে। বাকিগুলো কিনতে হবে। এজন্য ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৩ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। নির্বাচনী মুদ্রণের কাজ মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস (বিজি প্রেস) ও বাংলা নিরাপত্তা মুদ্রণালয়ে সম্পন্ন করা হয়।
নির্বাচন প্রস্তুতিতে আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না ॥ মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তবে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রাক প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে। ব্যালট পেপার ছাপাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিতে যেন পিছিয়ে না থাকে এজন্য নির্বাচন কমিশন এই কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে করছে।
ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতি যেন পিছিয়ে না থাকে সেজন্য কাজগুলো গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। মূলত পেপার প্রকিউরমেন্ট থেকে প্রিন্টিং পর্যন্ত সময়সীমা কতটুকু লাগে, উনারা বলেছেন যে, তিন মাস থেকে চার মাস সময় লাগে। যেভাবে ব্যাকওয়ার্ড ক্যালকুলেশন হবে সেভাবে (এগোবে)। নির্বাচনের তারিখ বা নির্বাচনের সিডিউল সম্পর্কে যে সিদ্ধান্তটা হবে, তখন যেন আমাদের ব্যাকওয়ার্ড ক্যালকুলেশনটা থাকে।
মঙ্গলবারের বৈঠক প্রসঙ্গে সচিব বলেন, আসন্ন নির্বাচনে কাগজ কী পরিমাণ লাগে সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়া, এ সংক্রান্ত বাজেটের সংস্থানের ব্যাপার এবং আগের নির্বাচনের কিছু কাগজপত্র বিজি প্রেসে রয়েছে সেগুলোর গুণগত মান নষ্ট হয়ে থাকলে ডিসপোজালের ব্যবস্থা করা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।
আখতার আহমেদ বলেন, আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি। তারা যাচাই-বাছাই করবে, যে কাগজগুলো নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডিসপোজাল করা হবে। কাগজের পরিমাণ কতটুকু ও কতদিন টাইম লাগতে পারে সে বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতি রাখার জন্য এ আলোচনা করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনে ২১ প্রকার ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, পাঁচ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকাসহ অনেক কিছু মুদ্রণ করতে হয়। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব মুদ্রণ করে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরা হয় সভায়। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র এবং প্রতীক বরাদ্দ হলে প্রার্থীর নাম, প্রতীক নিয়ে ব্যালট পেপার মুদ্রণ রয়েছে। যেগুলো মাঠপর্যায়ে পাঠাতে হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি সংসদীয় আসনে ৪৮ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। এবার সে সংখ্যা বাড়তে পারে। এছাড়া ভোটার সংখ্যাও বেড়ে সাড়ে ১২ কোটি হতে পারে। তাদের ব্যালট পেপার, মনোনয়নপত্রসহ ৫৩ ধরনের নির্বাচনী উপকরণ ছাপাতে হয়।
প্যানেল