
ছবিঃ সংগৃহীত
গোদাগাড়ী প্রতিনিধি
শত বছর ধরে দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাস মৎস্যজীবী জেলেদের। নাও, বৈঠা বেয়ে কোনমতে জীবন চলে তাদের। পদ্মার তীরবর্তী মানুষের একটি অংশ মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন। ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক এই তিনমাসে পর্যাপ্ত মাছ মিললেও বাকি নয়মাসে চলে না সংসার। দীর্ঘ নয়মাস পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় ঋণগ্রস্ত হয় তারা। ঋণের মাঝেই নৌকা মেরামতের প্রয়োজন পড়ে। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে নিতে হয় লোন। এভাবেই দিনে দিনে আরও ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী জেলেরা।
অভাবে যোগাতে পারেন না শিশুদের পুষ্টি, মানসম্মত পোশাক, বাসস্থানের চাহিদা। ভূমিহীন জেলেদের জীবনসংগ্রামের ভাঙা-গড়ার খেলায় হার মানতে হয় প্রকৃতির কাছে। এমন জীবনেই মানিয়ে নিয়েছেন এই গোষ্ঠীটি।
বেলে, রুই, কাতল, ইঠা, চিংড়ি মাছ ধরে দেশে আমিষের চাহিদা পুরণে ভুমিকা রাখলেও জেলেদের খোঁজ নেয় না কেউ। এমন নিঃস্বার্থ সংগ্রাম থাকে সবার দৃষ্টির আড়ালে।
উপজেলার সুলতানগঞ্জ, সারাংপুর, হাটপাড়া, কেল্লাবারুই পাড়া, রেলবাজার, মাদারপুর, উজানপাড়া সহ পদ্মা তীরের বিদিরপুর, প্রেমতলি এলাকায় ২৮৩২ জন জেলে পরিবারের বসবাস। ঝড়ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে মাছ ধরার নেশায় নদীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যান তারা। প্রাকৃতিক বাঁধার মুখে পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার দেওয়াই তাদের নিত্যদিনের সংগ্রাম।
গোদাগাড়ী উপজেলার হাটপাড়া পদ্মা তীরের ভগবন্তপুরের বাসিন্দা মৃত গান্দু মিয়ার ছেলে ফুরাদ বলেন, ‘নদীতে পানি নেই, স্রোত নেই আগের মতো। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পর থেকেই নদীর এমন অবস্থা। কয়েক দশক আগেও পদ্মায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক মাসে যা মাছ পাই তাতে খেয়ে পড়ে কিছুটা ঋণ পরিশোধ করি। বাকি ৯ মাসে আবার ধার দেনা করতে হয়। ছেলেমেয়ের মুখে পুষ্টিকর খাবার দিতে পারি না, পড়াশোনাও করাতে পারি না। ভালো পোশাক-আশাক দিতে পারি না। বাড়িঘর নিয়েও আতঙ্কে থাকি। ঝড় বাতাস এলেই ভয় হয়, কখন ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে যায়। বাপ-দাদার আমল থেকে মাছ মেরে খায় আমরা। তাই এই পেশা ছাড়তে পারি না। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে কোন সাহায্য সহযোগিতা আমরা পাইনি। এই সরকারের কাছে আমরা সহযোগিতা চাই।’
একই এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে বাইতুল বলেন, ‘আমার সংসারে পাঁচজন সদস্য। মাছ ধরে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইনকাম নাই, মাছ পাই না এখন। কি করে সংসার চালাবো। তিনমাসের ইনকাম দিয়ে কি সারাবছর চলা যায়? উপায় না পেয়ে মানুষের কাজ করতে হয়। কিস্তি নিতে হয়। আমাদের খুব সমস্যা হয় মাছ না পাওয়ার কারণে। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারি না। এভাবেই চলতে হয়।’
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ অহেদুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, গোদাগাড়ী উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় মোট ২৮৩২ জন জেলে আমাদের তালিকায় আছে। এদের মধ্যে ১২৯০ জনকে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছে। ২৫ কেজি করে চাল আমরা তাদেরকে দিতে পেরেছি। ভূমিহীন জেলেদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকারি কোন নির্দেশনা এই মুহুর্তে নেই। পেলে তখন সেটা দেখা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ কে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আরশি