ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ট্রাইব্যুনালে ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের, হাসিনা সহ ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার॥

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১১:২৪, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ট্রাইব্যুনালে ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের, হাসিনা সহ ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ১৪১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে আনীত আইসিটি বিডি মিস কেইস ২২টি দায়ের করা হয়েছে। 

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি ৮৭ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। ৫৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও সর্বশেষ আরও দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 
২২টি মামলার মধ্যে আশুলিয়া লাশ পোড়ানো, চানখারপুল হত্যাকাণ্ড, রামপুরা কার্নিসে ঝুলে থাকাকে গুলি ও শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সমস্ত কথা বলেছেন।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। সব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হবো। ট্রাইব্যুনালে মামলার পরিসংখ্যান নিয়ে বলা হয়, মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি মিস কেইসে ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ৩৯টি মামলার তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শ্রেণিবিন্যাসে রয়েছে বেসামরিক ৭০, পুলিশ ৬২, সামরিক ৯ জন। বেসামরিক ৭০ জন রয়েছেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি বিশেষায়িত সংস্থা। সমন্বয়ক, সহ-সমন্বয়ক সহ তদন্ত সংস্থার মোট তদন্তকারী কর্মকর্তার বর্তমান সংখ্যা ২৪ জন। তদন্ত সংস্থার সকল সদস্যই পুলিশ বাহিনী থেকে প্রেষণে বা চুক্তিভিত্তিক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। 
পুনর্গঠিত তদন্ত সংস্থা দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া প্রসিকিউশন টিমে চিফ প্রসিকিউটর সহ মোট ১৭ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। আইনের বিধান অনুসারে প্রসিকিউটরগণ তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের এক রায়কে কেন্দ্র করে ফুসে উঠে ছাত্র-জনতা। এ আন্দোলন নির্মূলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে। 
টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এতে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়। আন্দোলন নির্মূলে পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

পলাতকদের ধরতে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ জানিয়েছে প্রসিকিউশন। ১০ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই রেড নোটিশ জারির অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের একাধিক অভিযোগ আছে।

এই তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (বিপু), সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

আফরোজা

×