ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

কলাপাড়ায় সমুদ্রগামী ১০ হাজার জেলেসহ মৎস্যজীবীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ

মধ্যরাত থেকে শুরু হলো ভারতের সঙ্গে মিল রেখে সমুদ্রে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ০১:২৮, ১৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০১:৪২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

মধ্যরাত থেকে শুরু হলো ভারতের সঙ্গে মিল রেখে সমুদ্রে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে উপকূলজুড়ে সমুদ্রগামী জেলেদের মাছ ধরার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। প্রতিবেশী দেশে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে একই সঙ্গে একই সময়ে এই নিষেধাজ্ঞা জেলেসহ সকল শ্রেণির মৎস্যজীবীদের কাছে স্বস্তিদায়ক মনে হয়েছে।

জেলে ও মৎস্যজীবীরা স্বস্তিদায়ক পরিবেশে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় পার করতে শুরু করেছেন। আজ (১৫ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে কলাপাড়ায় সমুদ্রগামী ৮৫০ ট্রলারের অন্তত ১০ হাজার জেলে পালন করছেন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা।

শুধু এখানকার জেলেরা নয়, অন্তত সাড়ে তিনশ’ আড়ৎমালিকও সরকারের এই অবরোধের সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত মনে করছেন। কারণ বিগত দিনে বাংলাদেশের জেলেরা সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা পালন করলেও ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরত। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল এ পেশা সংশ্লিষ্ট জেলেসহ সবাই।

এছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালীন নির্দেশনা পালনে মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে উৎকণ্ঠায় থাকতে হতো। যা এ বছর অনেকটা সহজ হয়ে গেল। এমনিতে এ বছর আজ ১৫ এপ্রিল মধ্য রাত থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকছে। এই সময়ে সমুদ্রে দুর্যোগকালীন ঝুঁকিও থাকে। সমুদ্রে মাছ আহরণ নিষেধ থাকায় ট্রলারসহ কোনো মৎস্য নৌযানডুবিতে জেলেদের প্রাণ ও সম্পদহানির ঝুঁকিও থাকল না।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমনটাই মতামত দিলেন। সব মিলে একটা স্বস্তিদায়ক পরিবেশে এ বছর কার্যকর হচ্ছে সমুদ্রে সকল ধরনের মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম।

বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে মিল রেখে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের জন্য জেলেসহ সকল মৎস্যজীবী নেতৃবৃন্দ বছরের পর বছর দাবি করে আসছিলেন। অবশেষে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জেলেদের এই প্রত্যাশিত দাবি বাস্তবায়ন করায় তারা স্বস্তিবোধ করছেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির পটুয়াখালী জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক লালুয়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, ‘একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় অভাবনীয় উপকার হবে। কারণ আগে আমাদের জেলেরা মাছ ধরত না। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা আমাদের সাগরসীমানায় ঢুকে ইলিশসহ সব মাছ ধরে নিত। এ বছর তা আর পারছে না।’

গঙ্গামতির জেলে হাসান হাওলাদার বলেন, ‘এই দাবির কথা ১৫-১৬ বছর ধইর‌্যা কইতে আছি। অবশেষে কামে লাগল।’ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাগো দেশের মাছের ভাণ্ডারে এখন কেউ আর ভাগ বসাইতে পারবে না।’

বহু জেলে এই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জাল সেলাই, ট্রলার মেরামত ও সংসারের প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড করার পরিকল্পনাও করছেন। তবে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সরকারের দেওয়া খাদ্য সহায়তার ৮০ কেজি করে বরাদ্দকৃত চাল যথাযথভাবে বিতরণ না করায় সমুদ্রগামী হাজারো প্রকৃত জেলে চাল পাননি। তারা খাদ্য সংকটে পড়বেন বলে শঙ্কায় রয়েছেন।

এমনিতেই এ বছর ইলিশসহ অন্যান্য মাছের ভয়াবহ আকাল ছিল। তার ওপর ভুয়া কার্ডধারী বহু অপেশাদার লোকজন জেলেদের নামের চাল নিয়ে গেছে। একটি রাজনৈতিক দলের অযাচিত হস্তক্ষেপে বহু জেলে অর্ধেক চাল পেয়েছেন। আবার বস্তায় কমপক্ষে এক-দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত কম চাল বিতরণ করারও অভিযোগ রয়েছে।

তবে কলাপাড়ায় জেলে কার্ডধারী ১৮ হাজার ৩০৫ জন জেলের নাম তালিকায় থাকলেও বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১২ হাজার ৬৩৬ জনের চাল। এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ম-অনিয়ম যা-ই হয়েছে, তারপরও একই সময় নিষেধাজ্ঞা পালন শুরু হওয়ায় জেলেসহ এ পেশার এখানকার অন্তত ২৫-৩০ হাজার সমুদ্রনির্ভর জেলে কিংবা মৎস্যজীবীরা সরকারের এই সফলতায় স্বস্তিতে রয়েছে। তারা তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সঙ্গে আজকের প্রাপ্তিতে মানসিকভাবে খুশি হয়েছেন। 

কলাপাড়ার মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দর ছাড়াও, আশাখালী চাপলী, খালগোড়া, ডালবুগঞ্জ, তেগাছিয়া, মধুখালী, বানাতিবাজার, লালুয়া, বাবলাতলা, ঢোস এলাকায় শত শত ট্রলার ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে। জেলেরা যেন ছুটি কাটানোর জন্য পরিবার-পরিজনের সঙ্গে নানান পরিকল্পনা করছেন। মোট কথা, জেলেদের মুখে মুখে একই সময়ে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা পালনের বিষয়টির চায়ের দোকানে পর্যন্ত আলোচিত হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘বিগত সরকারগুলোর এ বিষয় নিয়ে আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল। তাই ভারতের সাথে একত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি।’

মেজবাহউদ্দিন মাননু/রাকিব

×