
ছবিঃ সংগৃহীত
জাতীয় সংসদের সন্ধ্যার আকাশে জলজল করছে আবু সাঈদ—সেই আবু সাঈদ, স্বৈরাচারের বুলেটের সামনে বিস্তীর্ণ যার বাহু, বুক জুড়ে মূর্তির ঝড়। যে ঝড় ওলটপালট করে দিয়েছিল তরুণ যুবক, এ দেশের ছাত্রজনতাকে। জনতার সে উত্তাল সংগ্রামে "পানি লাগবে, পানি!"—হাতে চিৎকার করা সেই ছেলেটি আবার ভেসে উঠলো মুগ্ধ, মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশের পুনর্জন্মে।
এসব দৃশ্যপট যখন দেখছিল জুলাইয়ের যোদ্ধা জনতারা, তখন পবিত্র সংসদের ঠিক মাথার উপর দেখা গেল—জুলাইয়ের জনতার আন্দোলনকে সালুট করা সেই রিকশাওয়ালা সুজনকে। আর পেছনে মুক্তির গান, দ্রোহের সুর। ২,৬০০ ড্রোনের আলোর খেলায় মানুষ ভেসে গেল ১৯৭১-এর গণমানুষের সংগ্রামের দিনগুলোতে। আঁকা হলো ’৭১-এর ধারাবাহিকতায় ’২৪-এর এই আন্দোলনে নারীর অভূতপূর্ব নেতৃত্বের ভূমিকা। দেখানো হলো—বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের ক্ষণ থেকেই আল-আকসার সংগ্রামকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করে।
নববর্ষের দিনে চীনা দূতাবাসের উপহার এই ড্রোন শো-র আয়োজনে দেখানো হলো চীন-বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের মোটিফ। জাতীয় সংসদ ভবনকে সামনে রেখে সন্ধ্যার আকাশে আবির্ভূত আবু সাঈদ, মুগ্ধদের হাত ধরে সংগ্রামমুখর জুলাই। পূর্বপুরুষের ’৭১ পরিভ্রমণ করতে করতে আবেগাপ্লুত মানুষেরা হয়ে পড়েছিল বাকরুদ্ধ। নতুন বছরে তাদের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ছিল—“বাংলাদেশে আর কখনো স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হবে না।”
নববর্ষ উদযাপন করতে আসা একজন বলেন,
"খুবই এক্সাইটেড ছিলাম, আবেগাপ্লুত হয়েছি। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এত সুন্দর একটা মুহূর্তে উপস্থিত হতে পেরে খুবই ভালো লাগছিল।"
আরও একজন বলেন,
"আবু সাঈদ-মুগ্ধ, তাঁদের যে আন্দোলনের প্রতিকৃতিটা যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবং সবশেষে প্যালেস্টাইনের প্রতি যে সাপোর্টটা দেখানো হয়েছে—এটা আসলেই অনেক ইমোশনাল একটা মোমেন্ট ছিল।"
আরও একজন বলেন,
"আজকে আমাদের সংসদ ভবনে যে ড্রোন শো হয়েছে, অত্যন্ত ভালো লেগেছে। এবং আমরা এখানে যত দর্শক ছিলাম, আমরা অত্যন্ত আপ্লুত হয়েছি। তাদের জন্য আমরা দোয়া করব। আমরা এই নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি—আমরা চাই আরো ভালো হোক আমাদের।"
একজন বলেন,
"বাংলাদেশে পুলিশ পাখির মত গুলি করে মারছে, এবং ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদেরকে মারছে। আমাদের সে রক্ত এখন টগবগ করছে। আমাদের আবু সাঈদ ভাই, মুগ্ধ ভাই—তারা আমাদের জন্য জীবন দিয়েছে। তাদেরকে দেখে আমরা আবার অনুপ্রাণিত হয়েছি। আবার যদি যুদ্ধ নামে, আমরা যুদ্ধ নামব।"
এর আগে মানিক মিয়া এভিনিউতে পরিবেশনা করে ১২টি ব্যান্ড দল। মঞ্চ মাতায় জুলাই শহীদদের স্মরণে। মানুষের কাছে পৌঁছানো পারসা ফোক কিংবদন্তি ইসলামউদ্দিন পালাকার, মিথুন চক্র এবং আনিসারা। সমবেত মানুষেরা বললেন, পরিবর্তিত সময়ের এই পহেলা বৈশাখ তারা উপভোগ করেছেন।
একজন বলেন,
"এবারের মত আমি আগে দেখিনি। একটা ছিল বটমূল, একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে ছিল। পরে এই আনন্দগুলো করতেছি, মনে হচ্ছে উন্মুক্ত, যে যেমন পারি সেমনে করে আনন্দ করতে পারছি।"
আরও একজন বলেন,
"আগস্টের পরে দেশে যেমন চেঞ্জ হইছে, পহেলা বৈশাখ তেমনই চেঞ্জ হইছে। আমি আশাও করি নাই এত মজা হবে।"
অতিথি হয়েছিলেন বিদেশী দূতাবাসের কর্তা, শিল্পী, সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারের উপদেষ্টারা।
চীনের রাষ্ট্রদূত বললেন,
"বাঙালির বর্ষবরণের আনন্দে ভূমিকা রাখতে পেরে তার দেশ গর্বিত।"
দুপুর থেকে শুরু হওয়া মানিক মিয়া এভিনিউয়ের এই উচ্ছ্বাস সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও কমেনি। "কমিউনিক টু বাংলা ঐতিহ্য"—সুর আর গানের সঙ্গে রক্তাক্ত জুলাইয়ের স্মরণ—এই আয়োজনকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করেছে বলে জানাচ্ছেন উপস্থিত মানুষরা।
ইমরান