ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

আজ চৈত্র সংক্রান্তির পাঁচনের দিন

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা, পটুয়াখালী।

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

আজ চৈত্র সংক্রান্তির পাঁচনের দিন

ছবিঃ সংগৃহীত

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা, পটুয়াখালী।

সরকারিভাবে প্রচলিত ক্যালেন্ডারে আজ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ। কিন্তু বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে আজ চৈত্র সংক্রান্তি অর্থাৎ বছরের শেষ দিন। বিশুদ্ধ মতের পঞ্জিকার চৈত্র সংক্রান্তির এই দিনটির সঙ্গে বাঙালির নানা আচার ও রীতি-নীতি জড়িয়ে আছে।

বিশেষত কৃষিভিত্তিক অধিকাংশ পরিবারে ভোররাত থেকে এসব আচার-রীতি-নীতি প্রথা শুরু হয়। যা রাত পর্যন্ত চলে। বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু নারীরা এসব আচার প্রথায় বেশি করে জড়িয়ে থাকেন। চৈত্র সংক্রান্তির আচার-প্রথার অন্যতম হচ্ছে-দুপুর ও রাতের আহারে পাঁচনের ব্যঞ্জন।

টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, তেতো সব রকম স্বাদ মিলিয়ে তৈরি হয় পাঁচন৷ রকমারি সবজি, শাক, বীজ, ডাল দিয়ে তৈরি এই রান্না খুবই সুস্বাদু হয়। পাঁচন খাওয়ার রীতির পিছনে যে ব্যাখ্যা রইয়েছে তাও খুব সুন্দর। সব রকম দুঃখ-দুর্দশা, রাগ-অভিমানকে পিছনে ফেলে নতুন বছরকে যেমন বরণ করে নেয়া হয়, ঠিক তেমনই জীবনের চলার পথে মিষ্টি-টক-তেতো সবরকম অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করে নেওয়ার রূপক হল পাঁচন৷

অন্যদিকে মনে করা হয় চৈত্র মাসের গরমে শরীর সুস্থ রাখতে সব স্বাদের মিশেলে তৈরি পাঁচন যথেষ্ট কার্যকর খাবার৷ প্রাচীনকাল থেকে বলা হয়েছে, পাঁচনে ডায়রিয়া, বসন্ত, টাইফয়েড প্রতিরোধ করে।

পাঁচন রান্নায় প্রধানত এঁচোড় অর্থাৎ কাঁচা কাঁঠালের বিচি, কুমড়ো, ঝিঙে, গোলআলু, কাঁচাকলা, মিষ্টিআলু, বরবটি, উচ্ছে, সজনে ডাটা, কুমড়োর ডাটা, সিসিমের দানা, কাঁচামরিচ, তেজপাতা, পাঁচফোড়ন প্রভৃতি ব্যবহার হয়। কাঁচা আমের ডাল ও কাঁচা আমের টক পাঁচনের আরেক উপাদেয় খাবার। বহু পরিবারে বেতফলের টক বা আচারও হয়।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে আজও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা বিপুল জনপ্রিয়। ক্ষেত-খামার থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সকল কাজে পঞ্জিকার ব্যবহার অনস্বীকার্য। আর এই পঞ্জিকার হাত ধরেই চলে আসছে চৈত্র সংক্রান্তির পাঁচন। যা ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।

হয়ত আজকাল পাঁচনের ব্যঞ্জনের পরিধি  অনেকটা কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, পল্লী অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের লতাপাতা, শাকসবজি কমে যাওয়া। ডুমুরের মতো ঝোপঝাড়ের বহু ফলমূল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানুষ কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কমে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যঞ্জনের বৈচিত্র্য কমিয়ে আনা হয়েছে। তার পরিবর্তে হাতের কাছে সহজে মেলে এমন কয়েক ধরনের তিতা জাতীয় সবজির ব্যঞ্জন রান্না হয়। এগুলোই এখন চৈত্র সংক্রান্তির ব্যঞ্জন।

শংকর লাল দাশ / আরশি

×