ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

প্রতিপাদ্য: বিপ্লবের সিঁড়ি বেয়ে আসুক নেমে আলো, নববর্ষে মুক্ত জীবন থাকুক আরো ভালো

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সম্পর্কে জানান দিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষ

নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সম্পর্কে জানান দিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষ

ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানান দিতে নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের আয়োজনে গরুসহ বড় গরুর গাড়ির স্থাপত্যসহ বিভিন্ন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনসমূহ প্রদর্শিত হয়েছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণভাবে নববর্ষ শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে রায়সাহেব বাজার হয়ে ঐতিহাসিক ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।

এবারের নববর্ষ উদযাপনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “বিপ্লবের সিঁড়ি বেয়ে আসুক নেমে আলো, নববর্ষে মুক্ত জীবন থাকুক আরো ভালো”। চারুকলা অনুষদের আয়োজনে শোভাযাত্রায় সূর্যমুখী ও শাপলা ফুল, অরিগামি পাখি, চড়কি, তালপাতার সেপাই, লোকজ খেলনা, গরুসহ বড় গরুর গাড়ির স্থাপত্যসহ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনসমূহ প্রদর্শিত হয়।

শোভাযাত্রা শেষে বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “এমন আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি চর্চা এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখবে।”

তিনি আরও বলেন, “১৪৩১ বঙ্গাব্দে দেশের মানুষের অসাধারণ ত্যাগ ও সংগ্রামের ফলে আমরা আজ ১৪৩২ বঙ্গাব্দের নববর্ষ একটি মুক্ত পরিবেশে উদযাপন করতে পারছি। এই অর্জনকে ধরে রাখতে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।” শোভাযাত্রার পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও প্রকাশনা উৎসব। মেলার স্টলগুলো সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, মুক্তমঞ্চ এবং রফিক ভবনের নিচে বসানো হয়েছে। স্টলগুলোতে হস্তশিল্প, গ্রামীণ খেলনা, পিঠা-পুলি, গয়না, প্রকাশনা সামগ্রীসহ নানা ঐতিহ্যবাহী পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

সাংস্কৃতিক আয়োজনের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে সংগীতানুষ্ঠান, নৃত্য, আবৃত্তি এবং বিশেষভাবে পরিবেশিত হচ্ছে জনপ্রিয় পালা নাটক ‘ভেলুয়া সুন্দরী’। এতে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও অতিথি শিল্পীরা।

বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যান্ড কনসার্ট। এতে অংশ নিচ্ছে জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘অ্যাশেজ’। এছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরের ব্যান্ড ‘চান্দের গাড়ি’ এবং ‘মেটাল ইরর’-এর পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন-এর ব্যান্ড ‘কিম্ভূত’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘অফসাইড’ এবং একাধিক একক শিল্পী পরিবেশনায় অংশ নেবেন।

কনসার্ট আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে এয়ারটেল, যারা মঞ্চসজ্জা এবং আয়োজন ব্যবস্থাপনায় সহায়তা প্রদান করেছে। বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে নির্মিত বিশেষ মঞ্চে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

“বিপ্লবের সিঁড়ি বেয়ে আসুক নেমে আলো, নববর্ষে মুক্ত জীবন থাকুক আরো ভালো" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৈশাখী আয়োজনটি সাজানো হয়েছে। পুরো আয়োজনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরব উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।

বৈশাখের রঙে রাঙানো এ আয়োজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে দেয় উৎসবের এক উচ্ছ্বসিত আবেশ। নববর্ষের এই অনুষ্ঠান বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

আসিফ

×