
ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে 'নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান' প্রতিপাদ্যে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নেতৃত্বে এই শোভাযাত্রা বের হয়। চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর ঘুরে পুনরায় চারুকলায় গিয়ে শেষ হয় এই বর্ণাঢ্য মিছিল।
এবারের শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ ছিল 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' মোটিফ, যা বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রতীকী চিত্রণ। উল্লেখ্য, শনিবার ভোরে অজ্ঞাতদুর্বৃত্তরা বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি এই মুখোশটি জ্বালিয়ে দিলে দ্রুত সময়ে ককশিটের ওপর পুনরায় এটি তৈরি করা হয়। শোভাযাত্রায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে তার প্রতীকী পানির বোতল স্থান পায়, যদিও প্রাথমিকভাবে তার প্রতীকী মোটিফ রাখার পরিকল্পনা পরিবারের অনুরোধে বাতিল করা হয়।
ফিলিস্তিনিদের সংহতিতে তরমুজের ফালি মোটিফ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক। এছাড়া বাঘ, ইলিশ, শান্তির পায়রা, পালকিসহ ৭টি প্রধান মোটিফ এবং সুলতানি-মুঘল আমলের মুখোশ, তালপাতার সেপাই, পটচিত্রসহ ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলি শোভাযাত্রাকে করেছে বৈচিত্র্যময়। পটচিত্রে ১৯৫২, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের সংগ্রামের পাশাপাশি বেহুলা-লখিন্দর, বনবিবি ও গাজীরপটের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা ১৯৯৬ সালে 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায়। তবে এবার নাম পরিবর্তন করে 'আনন্দ শোভাযাত্রা' রাখা হয়। গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটিই প্রথম ফ্যাসিবাদ-মুক্ত বর্ষবরণ উৎসব। এ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বৃহত্তর নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়।
২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিদেশি অতিথিদের অংশগ্রহণে এবারের শোভাযাত্রা হয়ে উঠেছে বহুত্ববাদী সংস্কৃতির মিলনমেলা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিল্প-সংস্কৃতির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিরোধী এই প্রকাশ্য প্রতিবাদ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
আঁখি