
.
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গত সরকারের আমলে হওয়া ৭ হাজার ১৮৪টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। অনেক সময় এমন মামলা আসে যেটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা নয়। এ বিষয়ে আমাদের অফিসাররা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার চুরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এটা করতে পারলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা ছিল।’ রবিবার দুপুরে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, অনেক যাচাই-বাছাই করে মামলা প্রত্যাহারের কাজটি করতে হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে ৭০-৮০ ভাগ মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে। বাকিগুলো রাজনৈতিক সরকার এলে তারা করবে। ‘মাগুরার শিশু আছিয়ার ধর্ষণ মামলার চার্জশিট প্রস্তুত। পুলিশ সদর দপ্তর সেটা খতিয়ে দেখছে। আজকের মধ্যে চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। এরপর নতুন আইনে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করা সম্ভব হবে।’
‘যেহেতু ডিএনএ রিপোর্টসহ সবকিছু পাওয়া গেছে, সে জন্য ৯০ দিনের আগেই এ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হবে বলে আমি আশাবাদী।’ জঙ্গি ও দাগী অপরাধীদের জামিনে মুক্তি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আসামিরা জামিন পেলে আইন মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু যারা জামিন পেয়েছেন তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় নেই। আর নিম্ন আদালত থেকে যারা জামিন পেয়েছেন তারা সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারা এজাহারভুক্ত মামলার আসামি না। পুলিশ রিপোর্টে যাদের রাজনৈতিক কিংবা অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ থাকে না তাকে জামিন দেওয়া ছাড়া আদালতের করণীয় থাকে না।’
সুইডেন আসলামসহ দাগী অপরাধীদের জামিনে মুক্তির বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের অনেকেই বিগত সরকারের সময়ে জামিন পেয়েছিলেন। কিন্তু তারা হয়তো ভয়ে বের হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর দ্রুত তারা জামিনে বের হয়ে গেছে।’ এ ছাড়া আসিফ নজরুল বলেন, ‘দুই বিলিয়ন ডলার চুরির পরিকল্পনা করা হলেও হ্যাকাররা শেষ পর্যন্ত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ৮৮ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয়েছিল। ওই সময় বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার পরিকল্পনা করা হয়।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা হ্যাক করা হয়েছে সেটা নিয়ে একটি রিভিউ কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে আমি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এ কমিটিতে গভর্নরসহ অনেকে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২ বিলিয়ন ডলার লুট করার প্ল্যান ছিল। এটা হলে আমরা দুর্ভিক্ষে পড়ে যেতাম। গত সরকার এটার তদন্ত করতে গড়িমসি করেছে। এটা নিয়ে সিআইডি যে তদন্ত করেছিল সেখানে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব কর্মকর্তারা জড়িত ছিল তাদের নাম তদন্ত কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সিআইডি রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম এসেছিল তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল সেটা জানতে চেয়েছি এবং পরবর্তী ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ করেন ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, তার বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুব শিগগির উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের ডিটেনশন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আপনাদের শুধু একটি জিনিস বলতে চাই, আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে মিটিং করেছি। আমরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এবং অন্য অনেকের বক্তব্যের বিষয়ে সচেতন আছি।’
প্যানেল