
.
কোনো কোনো দিন আছে যার শুরুটা হয় সুন্দরের সহযোগে। এমন দিনে পরাস্ত হয় সকল অসুন্দর। সকাল থেকেই সূচনা হয় সম্প্রীতির। দিনভর গাওয়া হয় মানবতার গান। সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে অনর্গল বলে যায় বিশেষ উপলক্ষে বিকশিত হওয়া অন্তর। শেকড়ের সংস্কৃতির জাগরণে কেঁপে ওঠে ধর্মের নামে অধর্মে লিপ্ত সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। মানবিক সমাজের তাগিদে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদী চেতনা। ধর্মের বিভেদ রেখা ঘুচিয়ে দেওয়া বাঙালি সত্তার কাছে হেরে যায় সমাজবিনাশী অপশক্তি। সম্প্রীতির আহ্বানে মানবতার মর্মবাণীতে সৃমদ্ধ ও কল্যাণময় সমাজ ও রাষ্ট্রের বিনির্মাণের প্রত্যয় প্রকাশের সেই বিশেষ দিন আজ সোমবার। বাংলা পঞ্জিকার হিসাবে নতুন বাংলা সন ১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ। রবি ঠাকুরের সুরাশ্রিত ভাষায়- এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ/তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ...। পুরনো বছরের দুঃখ-গ্লানি কিংবা সকল ব্যর্থতাকে পাশ কাটিয়ে আগামীর সম্ভাবনাকে আলিঙ্গনের দিন এই পয়লা বৈশাখ। বাঙালি জাতিসত্তার আপন কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রকাশের সুন্দরতম প্রকাশের দিন। কবি নজরুলের কাব্যিক কথায়- ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর ...।
উদার অসাম্প্রদায়িক উৎসবের পক্ষে জয়ধ্বনি করবে আজ সারা দেশের মানুষ। বিগত দিনের অপ্রাপ্তি ও আক্ষেপ ভুলে খুঁজে নেবে নতুন দিনের স্বপ্নের ঠিকানা। উচ্চারিত হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার। ধর্ম-বর্ণের বিভাজন পেরিয়ে সকলে মেতে উঠবে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রচনার আকাক্সক্ষায় । সকল অমঙ্গলকে পেছনে ফেলে মঙ্গলের পানে চোখ মেলে তাকাবে নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে।
ইতিহাসের সূত্রে জানা যায়, বাংলা নববষের্র সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে গ্রাম বাংলার কৃষিনির্ভর জীবনের। এ সম্পকের্র সূত্র ধরেই বাংলা সন প্রবর্তন করেন মোগল স¤্রাট আকবর। তার আমলেই বঙ্গাব্দের প্রবর্তন ঘটে। বঙ্গাব্দের মাস হিসাবে বৈশাখের প্রথম স্থান অধিকার করার ইতিহাসটি বেশিদিনের না হলেও, আদি সাহিত্যে বৈশাখের সন্ধান মেলে। দক্ষের ২৭ কন্যার মধ্যে অনন্য সুন্দরী অথচ খরতাপময় মেজাজসম্পন্ন একজনের নাম বিশাখা। এই বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারেই বাংলা সনের প্রথম মাসের নামকরণ হয় বৈশাখ। সেই সূত্রে আবহমানকাল ধরেই চলছে বৈশাখকে কেন্দ্র করে নববর্ষ উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিকতা। মূলত গ্রামীণ জীবনের উৎসব নববর্ষ কিংবা বর্ষবরণ কালের পরিক্রমায় ঠাঁই করে নিয়েছে নাগরিক জীবনে। এক সময় পরিণত হয়েছে সর্বজনীন উৎসবে।
নববর্ষ উদ্যাপনে আজ রাজধানীসহ দেশজুড়ে বিরাজ করবে সাজ সাজ রব। আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠবে প্রান্তিক জীবন থেকে নাগরিক মন। নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবার নববর্ষ উদ্যাপনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাতীয়ভাবে বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সকল জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণে ছড়িয়ে যাবে বর্ষবরণের আয়োজনে। সেই সুবাদে দেখা মিলবে চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, গারো, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার উদ্যাপন। নববর্ষ উপলক্ষে রবীন্দ্র সরোবরসহ ঢাকার নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত হবে নাচ-গান-কবিতার সমন্বিত বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠিত হবে ড্রোন শোসহ মনমাতানো আয়োজন। রাজধানীর বাইরে সরকারি আয়োজনে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় উপস্থাপিত হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ নানা কর্মসূচি। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের প্রভাতী আয়োজন দিয়ে রাজধানীবাসীর বর্ষবরণের সূচনা হবে। পয়লা বৈশাখের এই প্রভাতী আয়োজনে অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত জীবনের গান গাওয়া হবে। গানের সুরে, কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে ব্যক্ত হবে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা। আর ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজনটি শেষ হতেই বর্ষবরণের বহু বর্ণিলতাকে গায়ে মাখতে উৎসবপ্রিয় নগরবাসী ছুটে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। উচ্ছ্বসিত মনের ভালোলাগার অনুভবে অংশ নেবে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায়। জাতিগত বিভেদ কিংবা ধর্মীয় বিভাজন পেরিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের বারতা দেবে এবারের শোভাযাত্রা। সুরে সুরে উচ্চারিত হবে শান্তির বাণী। ইসরাইল কর্তৃক গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি জানানো হবে সহমর্মিতা।
নববর্ষে বিশিষ্টজনদের বাণী : নববর্ষ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশিষ্টজনরা বাণী দিয়েছেন। নববর্ষের বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পয়েলা বৈশাখ বাঙালির সম্প্রীতির দিন, মহামিলনের দিন। আবহমান কাল ধরে নববর্ষের এই উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি জেগে
ওঠে নবপ্রাণ স্পন্দনে, নব-অঙ্গীকারে। সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে এদিনে বাঙালি রচনা করে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, আনন্দ ও ভালোবাসার মেলবন্ধন। আসুন, আমরা বিগত বছরের গ্ল্যানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলি। ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এই বাংলা নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার।
নববর্ষে জাতির আত্মপরিচয়ের উজ্জ্বল উপাদান উল্লেখ করে ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশী জাতিসত্তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নববর্ষ উদ্যাপন। এই উৎসবমুখর দিনে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আবহমানকাল ধরে নানা রূপ ও বৈচিত্র্য নিয়ে জাতির জীবনে বারবার ঘুরে আসে পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের উৎসবের সঙ্গে যেন ভরে ওঠা প্রকৃতি ও প্রাণের যোগ আবহমানকাল ধরে বিদ্যমান। হৃদয়ে সঞ্চারিত হয় স্বজাতির অতীত গৌরব ও ঐশ্বর্য।
ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন ॥ নববর্ষের রংময়তায় নাগরিক মননের চেতনাকে বরাবরই শাণিত করেছে বাংলা নববর্ষ উদ্্যাপনে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন। আজ সকাল সোয়া ছয়টায় শুরু হবে দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির এ অনুষ্ঠান। এবার আঁধার পেরিয়ে সকলের মঙ্গল কামনায় ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ প্রতিপাদ্যে উদ্্যাপিত হবে ছায়ানটের বর্ষবরণ আয়োজন। গান, পাঠ ও আবৃত্তি ও কথনে সজ্জিত হয়েছে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক গান। গাওয়া হবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ পঞ্চকবির গান। খ্যাতিমান থেকে উদীয়মান শিল্পীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে লোকগান, দেশাত্মবোধক গান থেকে গণসংগীত। সুপ্রিয়া দাশের কণ্ঠাশ্রিত রাগ আলাপের মাধ্যমে পরিবেশনা পর্বের সূচনা হবে। গোটা আয়োজনে প্রাধান্য পাবে বৃন্দ গানের পরিবেশনা। সম্মেলক সুরে গাওয়া হবে সলিল চৌধুরীর গান ‘ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না’। এছাড় গাওয়া হবে ‘মোরা সত্যের ’পরে মন আজি করিব সমর্পণ’, ‘এই বাংলা রবি ঠাকুরের এই বাংলা কবি নজরুলের’, ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’ ও ‘সকলকলুষতামসহর, জয় হোক তব জয়’সহ নয়টি সম্মেলক গান। একক সংগীত পরিবেশন করবেন খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, লাইসা আহমদ লিসা, আবুল কালাম আজাদ, সেঁজুতি বড়ুয়া, সুমন মজুমদার প্রমুখ। সঙ্গে থাকবে তিনটি পাঠ পরিবেশনা। সকল পরিবেশনা শেষে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিসহ সামগ্রিকতাকে ধারণ করে নববর্ষের বাণী বা কথন উপস্থাপন করবেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী। সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক শিল্পী অংশ নেবেন আয়োজনে। শিল্পীদের মধ্যে ছেলেদের পরনে থাকবে মেরুন আভার পাঞ্জাবি। মেয়েরা পরবেন মেরুন আভাময় পারের অফ হোয়াইট রঙের শাড়ি। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে। এছাড়া বিটিভিও সরাসরি সম্প্রচার করবে এ অনুষ্ঠান।
চারুকলার আনন্দ শোভাযাত্রা ॥ নববর্ষে রাজধানীতে সবচেয়ে রং ছড়ানো আয়োজনটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। রংময় এ শোভাযাত্রাটি কালক্রমে হয়েছে পহেলা বৈশাখ উদ্্যাপনের অন্যতম জাতীয় অনুষঙ্গ। এবারের শোভাযাত্রা হবে অনেক বেশি বর্ণিল ও রঙিন। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রত্যাশায় শোভাযাত্রায় বাঙালির সমান্তরালে দেখা মিলবে চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরাসহ সর্বমোট ২৮টি জাতিসত্তার উদ্যাপন। শুধু কি তাই! এবারে শোভাযাত্রায় সুরের আশ্রয়ে গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হবে। দুই শতাধিক মিউজিশিয়ান গিটারসহ নানা তালযন্ত্রের সুরেলা শব্দধ্বনিতে সহমর্মিতা জানাবে ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি। সংঘাতের পথ পরিহার করে শান্তির গান গাইবে। তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’।
এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। শোভাযাত্রায় ছয়টি শিল্প-কাঠামোর থাকার কথা থাকলেও পুড়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতির মোটিফটির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানায়, এটি পুনরায় তৈরি হলেও সেটি থাকলেও শেষ পর্যন্ত শোভাযাত্রায় থাকবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। বাকি পাঁচ মোটিফের মধ্যে থাকবে জাতীয় মাছ ইলিশের প্রতিকৃতি। শোভাযাত্রার আরেক মোটিফে ধরা দেবে সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পীদের কাঠের বাঘ। শোভযাত্রায় আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ফেলে আসা অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি। পঞ্চম শিল্প-কাঠামো হিসেবে থাকবে শান্তির দূত পায়রা। আরেক মোটিফে ধরা দেবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান। ত্রিমাত্রিক আকাশে বড় বড় হরফে মূর্ত হবে ‘৩৬ জুলাই’ শীর্ষক অভ্যুত্থানের সাক্ষ্যবহ কালোত্তীর্ণ এক জোড়া শব্দ। এছাড়া শোভাযাত্রায় থাকবে অসংখ্য ছোট ছোট মোটিফ। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজা-রানীর ২০টি বড়সড় মুখোশ, কুড়িটি রঙিন চড়কি, ছোট বাঘের মুখোশ থাকবে দুই শতাধিক। থাকবে হাতি-ঘোড়া-বাঘের মুখোশ। শুধু কি তাই! সঙ্গে ঘোড়ার গাড়ি থেকে ত্রিচক্র যান রিক্সা। চমক হিসেবে থাকবে ১০০ হাত লম্বা একটি স্ক্রল পেইন্টিং। টাইগার নাজিরের চিত্রিত এই পটচিত্রটি ড্রোনের সাহায্যে দেশবাসীর পাশাপাশি বিশ্ববাসীর কাছে মেলে ধরা হবে। এর বাইরে শোভাযাত্রায় রং ছড়াবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিল্পীদের উপস্থিতি। তারা থাকবেন শোভাযাত্রার ব্যানারের সামনে। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের নাচ-গানের পরিবেশনায় শোভাযাত্রাকে মাতিয়ে তুলবেন এই শিল্পীরা। সকাল নয়টায় বের হবে এই শোভাযাত্রা। চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ গোলচত্বর ঘুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হবে শোভাযাত্রা।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বৈশাখী কনসার্ট ॥ পহেলা বৈশাখ বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে বৈশাখী কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এতে সহযোগিতা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কনসার্টের পর সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠিত হবে ড্রোন শো। এই শোর থিম হচ্ছে ‘নতুন বছর, নতুন বাংলাদেশ’। সংসদ ভবনের দক্ষিণ পাজায় দুই হাজার ৬০০ ড্রোন ওড়ানো হবে। চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিতব্য এ আয়োজনে জুলাই অভ্যুত্থান ও নববর্ষকে রাখা হবে কেন্দ্রে। এই কনসার্টের শুরুতেই পারফরম্যান্স করবে বান্দরবানের বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল। গারো জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ড এফ মাইনর সংগীত পরিবেশন করবে। সমবেত সংগীত ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি সকল শিল্পীরা পরিবেশন করবেন। ‘দেওরা’সহ আরো একটি ঐতিহ্যবাহী পালা পরিবেশন করবেন ইসলামউদ্দিন পালাকার। এরপর দ্বৈত ও একক সংগীত পরিবেশন করবেন রাকিব ও সাগর দেওয়ান এবং দুটি দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করবেন রাকিব ও আরজ আলী ওস্তাদ। একক সংগীত পরিবেশন করবেন আতিয়া আনিশা, আহমেদ হাসান সানি এবং জুলাই আন্দোলনের গানসহ তিনটি গান পরিবেশন করবেন পারশা।
অন্যান্য আয়োজন ॥ সুরের ধারার আয়োজনে সকাল ছয়টা থেকে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠিত হবে হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এবারের অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিল্পীদের পাশাপাশি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরাও অংশ নেবেন। থাকবে লোকজ মেলা। এ মেলায় দেশীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটবে। নাগরদোলা, লাঠিখেলাসহ দেশীয় নানান তৈজসপত্রের পসরা নিয়ে বসবেন দোকানিরা। নববর্ষের সকালে বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির নজরুল মঞ্চে বর্ষবরণ সংগীত, নববর্ষ বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। বক্তৃতা করবেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। সভাপ্রধানের বক্তব্য দেবেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। এর বাইরে নববর্ষ উপলক্ষে একাডেমির উদ্যোগে বইয়ের আড়ং চলবে। এছাড়া নববর্ষের দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের উল্টোদিকে সত্যেন সেন চত্বরের অনুষ্ঠান করবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বেলা সাড়ে তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়’ শীর্ষক নাচ-গান ও কবিতার সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করেছে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ।
প্যানেল