ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

বিডা সামিটে ৩১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেয়েছে বাংলাদেশ : আশিক চৌধুরী

প্রকাশিত: ২২:৪১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২৩:৪৮, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

বিডা সামিটে ৩১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেয়েছে বাংলাদেশ : আশিক চৌধুরী

ছবিঃ সংগৃহীত

চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সামিট শেষ হয়েছে। এই সামিটে হান্ডা গ্রুপ ও শপ আপ মিলিয়ে বাংলাদেশে মোট ৩,১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, দশে দশ পাওয়ার মতো হয়নি সব ক্ষেত্রে। কারো যদি হতাশা থেকে থাকে, তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তবে তিনি বলেন, গত তিন মাস ধরে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের একটি সামিট আয়োজনের জন্য।

আয়োজনে কেবল সরকার ছিল না; অংশ নিয়েছে মিডিয়া কমিউনিটি, বেসরকারি খাত, বিভিন্ন দূতাবাস, বিদেশি অংশীদার, রাজনৈতিক দল এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলোও। আশিক চৌধুরী জানান, যতটুকু ভালো হয়েছে, তার পুরোটাই সবার ক্রেডিট, আর যেসব জায়গায় ঘাটতি ছিল, তা আয়োজকদের। ভবিষ্যতে আরও ভালো করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যেভাবে সাড়া পাওয়া গেছে, তাতে তারা অত্যন্ত আশাবাদী। প্রতি বছর এরকম আয়োজন করা উচিত বলেও মত দিয়েছেন তিনি।

সামিটের রাজনৈতিক অনুমোদন ও ধারাবাহিকতা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও আশিক চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আগামী সংসদ সদস্যদের জন্যও একটি সাধারণ লক্ষ্য হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বড় রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তারা সামিটে অংশগ্রহণ ও সমর্থন দিয়েছেন, এজন্য তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।

সামিট সফল হয়েছে কি না—এই প্রশ্নের উত্তর সময়, বাজার এবং জনগণ দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ছিলেন ৭১০ জন, যার মধ্যে ৪১৫ জন বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি, আর বাকিরা ছিলেন দেশীয় ব্যবসায়ী, সরকারি সচিব বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের প্রতিনিধি। ব্রেকআউট সেশনসহ সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণ ছিল সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। তিনি আরও জানান, সামিটে ১৩০ জন প্যানেলিস্ট ছিলেন এবং ১৫০টি দ্বিপাক্ষিক মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সারাদিন উপস্থিত ছিলেন। ৬টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে—কিছু তাৎক্ষণিক, কিছু দীর্ঘমেয়াদি।

বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং পার্টনার সংস্থাগুলোর অনুদান ছিল আরও ৩.৫ কোটি টাকা।

তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বিষয় তুলে ধরেন। প্রথমত, বিদেশিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা বদলানো দরকার, কারণ নেতিবাচক পারসেপশনের কারণে বিনিয়োগ শুরুর আগেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ সূচকের (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) পুরনো র‍্যাংকিং অনেকেই এখনো রেফার করেন, যা ২০২১ সালের এবং অনেক ত্রুটির কারণে বিশ্বব্যাংক নিজেই তা বন্ধ করে দিয়েছে। তবু অনেকেই ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তুলে ধরতে হবে, আর সেই দায়িত্ব বিডার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২.০ কেন আলাদা এবং আমরা কী কী উদ্যোগ নিয়েছি, তা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে। যারা এবার প্রথম বাংলাদেশে এসেছেন, তারা সিদ্ধান্ত নিতে এক বছর সময় নেবেন। তাদেরকে ট্র্যাক করে, সহায়তা করে, এবং বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যদি চারদিনের এই আয়োজনের কারণে ভবিষ্যতে ৪ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা একটুও বদলায়, তাহলে সেটিই তাদের জন্য অনেক বড় অর্জন হবে।

দ্বিতীয়ত, দেশের মানুষের আত্মবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষকে যদি সামান্য সুযোগ, উৎসাহ আর ইতিবাচকতা দেওয়া যায়, তাহলে তারা দেশ গড়ার কথা ভাববে, দেশ ছাড়ার নয়। তিনি বলেন, এই সামিটের মাধ্যমে তারা একটি পজিটিভ মোমেন্টাম তৈরির চেষ্টা করেছেন।

সামিটের কার্যক্রম তিনভাগে ভাগ করে পরিচালিত হয়েছে। ৭ ও ৮ এপ্রিল বিনিয়োগকারীদের ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে, স্টার্টআপদের জন্য ছিল পৃথক সেশন। ৯ এপ্রিল সকালে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও লক্ষ্য তুলে ধরা হয়, আর সন্ধ্যায় দেশের সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরা হয়। ৯ ও ১০ এপ্রিল চলেছে নেটওয়ার্কিং, আলোচনা এবং চুক্তি স্বাক্ষরের ধারা।

তিনি আরও জানান, সামিট উপলক্ষে একটি থিমেটিক ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যা সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত। তার প্রেজেন্টেশন নিয়েও আলোচনা হয়েছে, কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সেটি মূল বিষয় নয়; আসল হলো বিনিয়োগকারীদের এবং উদ্যোক্তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।

সবশেষে তিনি সবাইকে পরামর্শ দেন, সামিট সংক্রান্ত তথ্য ভেরিফায়েড সোর্স থেকে নিতে এবং কোনো বিভ্রান্তিতে না পড়তে। তিনি কৃতজ্ঞতা জানান তাদের পার্টনারদের প্রতি—যাদের ছাড়া এই সামিট সফল হতো না। 

আশিক চৌধুরীর মতে, এই সামিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/1CKa6VsuU2/

মারিয়া

×