
ছবি: সংগৃহীত
প্রচন্ড-তাপদাহে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে শতাধিক নলকূপগুলোতে পানি উঠছে কম। বেশির ভাগ নলকূপ থেকে কোন পানি উঠছে না । পুকুর জলাশয় ভরাট করে ঘরবাড়ি ও বাণ্যিজিক ভবন করায় নাঙ্গলকোটে প্রচন্ড তাপাদাহে সাধারণ মানুষ পড়েছে পানি সংকটে। বৃষ্টির দেখা মিলছে না।
নাঙ্গলকোট উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা একসময়ে সড়কের পাশে ও হাট বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় ছিল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ । গ্রীষ্মকালে এলাকার মানুষ তাপদাহ থেকে স্বস্তি পেতে এই সব গাছের ছায়ায় বসে নিচে সুশীতল বাতাশে স্বস্তি পেত। গত কয়েক বছর ধরে সড়কের পাশে ও হাট বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় খাকা রাস্তার পাশে গাছ গুলো কেটে সাবার করে ফেলেছে । ফলে প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে সাধারণ মানুষ আর গাছের নিছে বসে গরম থেকে স্বস্তি নিতে পারছে না।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় পৌরসভা সহ শতাধিক টিইউবওয়েলে ভূগর্ভ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এসব এলাকার নলকূপগুলোতে এখন আর পানি উঠছে না। ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। কয়েকটি নলকূপে অনেকক্ষণ চাপ দেওয়ার পর সামান্য পানি ওঠে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনাবৃষ্টি, নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া ও অপরিকল্পিত সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে। সাধারণত পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। আর যদি তা ৩০ ফুটের নিচে নেমে যায়, তাহলে বাসাবাড়িতে মোটর দিয়ে পানি তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার টিইউবওয়েল পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শত শত নলকূপে পানি উঠছে না। অকেজো হয়ে আছে এসব কল। অথচ বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে ও পানির কোনো দেখা নেই এ অঞ্চলে। খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুরের পানি শুকিয়ে মাটি চৌচির হয়ে গেছে। অনাবৃষ্টিতে প্রচন্ড- দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছেন মানুষজন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। কোথাও কোথাও বৃষ্টির জন্য বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করছেন তারা। টিউবওয়েলগুলোতে দশ চাপে এক গ্লাস পানি ওঠে।
নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউপির পাটোয়ার গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের বাড়ির আশপাশের অন্তত ১০টি বাড়িতে টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। পাশের একটি ডিপ থেকে পানি এনে ব্যবহার করছি। আর পুকুরের পানিতে গোসল করি।
জোড্ডা ইউপির বাইয়ারা গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, বছরে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত নলকূপে পানি ওঠে না। পাশাপাশি মোটরগুলোতে পানি একবারে কম ওঠে। ডাকাতিয়া নদীতে ও পানি নেই। বোরো ধানের আবাদ নিয়ে সমস্যায় আছি। ভালোভাবে পানি না দিতে পারলে ফলন কম হবে। রোগের মাত্রা বেড়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এখন বৃষ্টি না হওয়া পানির স্তর অনেক নিছে সেমে গেছে। তবে বোরো আবাদে অধিকাংশ ধান পেকে গেছে এতে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না । তবে নাঙ্গলকোট উপজেলায় প্রায় নলকূপেই পানি ওঠে না। অনাবৃষ্টিতে ফলদ গাছে ফলন কম হয়, যা কয়েকটা ফল আসে তাও আকারে ছোট হয় এবং বেশির ভাগই ঝরে যায়।
নাঙ্গলকোট উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কামাল হোসেন বলেন, এখন প্রতি বছরই পানির স্তর তিন থেকে চার ইঞ্চি নিচে নেমে যাচ্ছে। সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে পানি তোলার ফলে মাটির নিচের একটা স্তরে পানিশূন্যতা তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতের বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট নিরসনের জন্য এখন থেকে পরিকল্পিতভাবে গভীর নলকূপ বসানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে নাঙ্গলকোটেও ৩২ ফুট গভীরে চলে গেছে পানির স্তর, তবে বৃষ্টি হলে পানি স্তর উপরে উঠে আসবে।
মেহেদী হাসান