ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

কত টাকার বিনিয়োগ এলো জানালেন আশিক মাহমুদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার 

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

কত টাকার বিনিয়োগ এলো জানালেন আশিক মাহমুদ

ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, সদ্য সমাপ্ত বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘোষণা এসেছে। সমঝোতা স্মারক হয়েছে ৬টি। তবে, সম্মেলন আয়োজনে মোট ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

রবিবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটা বলেন।

এসময় আশিক মাহমুদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে তৈরী করতে সরকার কাজ করছে। তবে এজন্য দেশের দ্রুত সমুদ্র বন্দর নির্মান করা প্রয়োজন।

চৌধুরী আশিক বলেন, আমরা যে লক্ষ্য নির্ধারণের চেষ্টা করছি তা হলো- বাংলাদেশকে আঞ্চলিক উৎপাদন শক্তিকেন্দ্র হিসেবে তৈরী করা। এর জন্য যেটা অত্যাবশ্যক প্রয়োজন সেটা হলো বন্দর যোগাযোগ স্থাপন। এই মুহুর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় ও প্রধান বন্দর হলো চট্টগ্রাম বন্দর। এরসঙ্গে লালদিয়া, পিসিটিতে কয়েকটা পোর্ট আছে, এগুলো সবই নদীবন্দর। বাংলাদেশ কোন সামুদ্রিক বন্দর নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রবন্দর নিয়ে কথা বলছি সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের কোম্পানি পিএসএ এবং টিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে। তারা অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে সমুদ্রবন্দর ইস্যুটা সমাধান করে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অতিক্রম করবো।

তিনি বলেন, মাতারবাড়িতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর আছে, তার আশেপাশে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের মতো তৈরী করে পরিচালনার চেষ্টা আছে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় বিষয় ছিল যে, আমাদের পোর্ট এবং এয়ারপোর্ট যেগুলো দিয়ে আমাদের সামগ্রিক যোগাযোগ উন্নত করবে, সেটা কিভাবে তদারকি করছি এবং কত দ্রুত এই প্রকল্পগুলোকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো যেটা সম্পূর্ণভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

রবিবার সকালে বিডা ও বেপজা’র গভর্নিং বডির সভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এফডিআই’তে কোন প্রণোদনা দিতে পারি কিনা, তা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। ধরুন একজন বাংলাদেশী যিনি চীনে থাকেন, তিনি চায়নিজ ভাষা জানেন। চায়নিজ বিভিন্ন জায়গায় তার যেভাবে প্রবেশাধিকার আছে সেটা বিডার কখনো হবে না, বাংলাদেশী কারো হবে না। তিনি যদি ১০০ মিলিয়ন ডলারের কোন বিনিয়োগ নিয়ে আসেন, তাহলে আমরা রেমিট্যান্সে যেমন ২ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে থাকি সেভাবে কেন তাকে একটি অংশ পরামর্শক ফি হিসেবে দিতে পারবো না? তাই আমরা এমন একটি মডেল নিয়ে কাজ করছি, যেন কোন বাংলাদেশী ব্যক্তিস্বত্তা নিজে স্বপ্রণোদিত হয়ে এবং নিজের সক্ষমতায় বিদেশ থেকে কোন বিনিয়োগ নিয়ে আসলে তাকে আমরা রেমিট্যান্সের মতো পুরস্কৃত করতে পারি।

সভায় ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি আমাদের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল দরকার নেই। তার ধারাবাহিকতায় আমরা আজ (রবিবার) ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেটার মধ্যে রয়েছে সোনাদিয়া, সুন্দরবনে একটা আছে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক হওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি আমরা আরেকটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি, ভবিষ্যতে যখন অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তখন একটা আন্ত:মন্ত্রণালয় আলোচনা হতে হবে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে যে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়গুলো তাদের সেবাসংক্রান্ত কাজগুলো নিশ্চিত করবে, তারপর আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করবো। তা না হলে, বছরের পর বছর কাজ ঝুলে থাকে, বিনিয়োগকারীদের কাজ চালানোর সুযোগ দেয়া যায় না। পাশাপাশি বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস পুরোপুরি সক্রিয় করে আগামী এক মাসের মধ্যে ম্যানুয়াল সেবা বন্ধ করা হবে বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান।

সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে কিন্তু এটাকে আমরা একটা সুযোগ হিসেবে দেখছি। বাতিল হয়ে যাওয়ায় আমাদের লাভ হয়েছে তেমন না, কিন্তু দেখা গেছে ঢাকা থেকে অন্য দেশে ট্রান্সপোর্ট খরচ বেশি, কিন্তু কলকাতা বা দিল্লি থেকে কম। কিভাবে সেটা জানি না। কারণ ঢাকা থেকে কলকাতা বা দিল্লিতে ট্রান্সপোর্ট করার পর যেখানকার সকল ব্যয় ওই দেশ পায়। এতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু কম হয়। এক্ষেত্রে আমাদের সুযোগ এসেছে এই সমস্যা চিহ্নিত করার এবং সেটা নিয়ে কাজ করার।

সংবাদ সম্মেলনে বিডা’র চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এবারের সম্মেলনে আমরা দেখেছি, যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি তারাও সারাদিন হোটেলে এসে বসেছিলেন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য, একটা ইনফরমাল আলোচনার জন্য। এই সম্মেলনে আমরা যে পরিমাণ আগ্রহ দেখেছি সেখান থেকে আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে এখন থেকে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরণের বিনিয়োগ সামিট নিয়মিত করা দরকার। আমি চিন্তা করছি এই ধরণের প্রোগ্রাম যেগুলো পজেটিভ ইন্টারেস্ট ও মোমেন্টাম তৈরী করতে পারে সেগুলো আরো আয়োজন করার।

তিনি বলেন, সম্মেলন সফল হয়েছে কি হয়নি, সেটা সময় বলে দেবে। এজন্য কিছু নির্দেশিকা আছে, পরিসংখ্যানগত এবং মানগত। পরিসংখ্যানগত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, এবারের সম্মেলনে ৭১০ জন বিনিয়োগকারী অংশগ্রহন করেছে, যেখানে ৪১৫ জন বিদেশী। এছাড়া সামিটে যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সেমিনারগুলোতে আলোচক ছিলেন ১৩০ জন। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বিটুজি বৈঠক হয়েছে ১৫০টি। এছাড়া সম্মেলনে ৩ হাজার ১’শ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। সমঝোতা স্মারক হয়েছে ৬টি। সম্মেলন আয়োজনে মোট ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এরমধ্যে সরকারের ব্যয় দেড় কোটি টাকা এবং বাকি সাড়ে তিন কোটি টাকা সহযোগীদের থেকে প্রদান করা হয়েছে। তিনি সামিটের পার্টনার-ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি, সিটি এনএ, এইচএসবিসি, বিজিএমইএ, ডাচ দূতাবাস, লাইটক্যাসেল পার্টনার্স, ইনস্পিরা ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং, সাজিদা ফাউন্ডেশন এবং ইবিএল-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এই ৩ হাজার ১’শ কোটি টাকা শুধু সম্মেলনের কারণে এসেছে এমন নয়, এই বিনিয়োগ নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ চলেছে। তবে আমাদের এবারের সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা, তাদের মনোভাব পরিবর্তন করা।

প্রেস ব্রিফিংয়ের শেষদিকে তিনি আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানান সামিটের ইভেন্ট পার্টনার ইন্টিগ্রেটেড মার্কেটিং সার্ভিস লিমিটেড, মার্কেটিং ও কমিউনিকেশনস পার্টনার হাই ভোল্টেজ লিমিটেড এবং মূল ইভেন্ট পার্টনার বিশ্বব্যাংক, ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) ও ইউএনডিপি-কে, যাদের অবদান ছাড়া এই সফল আয়োজন সম্ভব হতো না। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিডার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ও উপ-প্রেস সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

আশিক

সম্পর্কিত বিষয়:

×