
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার সদ্য নির্মিত মাছ বাজার ভবনের ব্যবহার শুরুর ছয় মাসের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে ভবনের সিঁড়ির টাইলস, জমছে পানি, দেখা দিয়েছে নানা ত্রুটি। অথচ ভবনের চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার অনেক আগেই। এতে প্রশ্ন উঠেছে নির্মাণের মান ও তদারকি নিয়ে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৭ জুলাই “মাছ বাজার ভবন, পাবলিক টয়লেট ও বাসস্ট্যান্ড যাত্রী ছাউনি” নির্মাণের জন্য এক কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে যৌথভাবে কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘অন্তরা ট্রেডিং কোম্পানি ও কমল চন্দ্র দাস’ কে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ, নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে ভবনের কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালের জুনের শেষ দিকে। কিন্তু বিল তৈরির তারিখ ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরেই এবং চূড়ান্ত চেক দেওয়া হয় ২০২৪ সালের মার্চে—অর্থাৎ কাজ শেষ হওয়ার আগেই পুরো বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের উদ্বোধনের নামফলকে কৌশলে তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, ভবন ব্যবহারের ছয় মাস পার না হতেই সিঁড়ির টাইলস ভেঙে গেছে, উঠে গেছে। সিঁড়ি ও ফ্লোরে পানি জমে থাকে, ফলে চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী মিন্টু মিয়া বলেন, “কিছুই ঠিকমতো করে নাই। টাইলস ভেঙে গেছে, পানি জমে থাকে। আবার অনেকে সিঁড়ির পাশে ময়লা পলিথিন ফেলে রাখে। এই অবস্থায় আমরা কীভাবে ব্যবসা করবো?”
এদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের জামানত বাবদ আট লাখ ১২ হাজার টাকা প্রথমে আটকে রাখা হলেও পরবর্তীতে তা পরিশোধ করে দেওয়া হয়। ফলে এখন ভবনের সমস্যাগুলোর দায় নিতে কেউ এগিয়ে আসছে না।
তবে কলাপাড়া পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভবনের ত্রুটিগুলো সংশোধনের জন্য সাব-কন্ট্রাক্টর নুর মোহাম্মদকে দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। তবে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ত্রুটি থেকে গেছে আগের মতোই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যথাযথ তদারকির অভাবে কাজের গুণগত মান বজায় থাকেনি। নির্মাণকাজ চলাকালে প্রকৌশল বিভাগ ছিল চরম উদাসীন। অভিযোগ রয়েছে, কমিশন বাণিজ্য এবং তদারকিতে গাফিলতির কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি দ্রুত সরেজমিন পরিদর্শন করবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
মেজবা/রবিউল