ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

রাজবাড়ীর চরাঞ্চলে চন্দ্রবোড়ার ছোবলের আতঙ্ক, কৃষকদের জীবন হুমকিতে

শফিকুল ইসলাম শামীম, নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

রাজবাড়ীর চরাঞ্চলে চন্দ্রবোড়ার ছোবলের আতঙ্ক, কৃষকদের জীবন হুমকিতে

ছ‌বি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপের দাপটে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি উজানচর ইউনিয়নের মজলিসপুর, চরমহিদাপুর, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চরকর্নেশন ও কলাবাগান এলাকায় এই বিষধর সাপের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে, যা স্থানীয়দের মাঝে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে

রোববার (১৩ এপ্রিল ২০২৫ ইং) মজলিসপুর এলাকা গিয়ে এলাকাবাসী সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় ৯৯ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজের সাথে সরাসরি জড়িত। এই মৌসুমে আউশ ধান, আমন ধান, বোরো ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, তিল, বাদাম, মরিচ, উস্তা, করোলা, পটলসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি হাজার হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে। তবে এই এলাকায় ইতিমধ্যে ৩জন ব্যক্তিকে কৃষি কাজের সময় চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপে ছোবল দিয়ে। এর মধ্যে একজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে এসেছেন, বাকি দুইজন এখন পর্যন্ত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। 

এদিকে চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) আতঙ্কে কৃষক ঘরে পাকা ফসল তুলতে সাহস পাচ্ছেন না। কাজের লোকের অভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষক মাঠে গিয়ে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকে ভয়ে ভয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।  

উপজেলার চর মজলিসপুর এলাকার বাসিন্দা কৃষক আব্দুর রহমান শেখ জানান, আমার ছেলে শুকুর আলী শেখকে মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত থেকে রাসেল ভাইপার সাপ ছোবল দেয়। তাকে রাজবাড়ী জেলার পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুর মেডিকেল কলে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন তিনি সুস্থ রয়েছেন। 

এসময় আসলাম শেখ বলেন, কৃষি কাজের সময় আমার ছেলে সাগর শেখের রাসেল ভাইপার সাপ ছোবল দেয়। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ডাক্তার বলেছে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

স্থানীয়রা বলছেন, সাম্প্রতিক বন্যা ও ভূমির পরিবর্তনের কারণে সাপের আবাসস্থল ও চলাচলের পথ পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে চরাঞ্চলে বিষধর সাপের আনাগোনা বেড়েছে। বিশেষ করে চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপের উপস্থিতি কৃষি কাজকে করে তুলেছে ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে, এলাকার কৃষকরা দাবি তুলেছেন, এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন, পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সরবরাহ এবং সাপে কামড় দিলে তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হোক। তারা বলেন, চর এলাকায় অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকলে কৃষক মাঠে কাজ করতে সাহস পাবে। 

চরমহিদাপুরের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক মতিয়ার রহমান মতি বলেন, “আমাদের জীবনের নিরাপত্তা এখন চন্দ্রবোড়ার হাতে। শুধু আতঙ্ক নয়, এটা এখন প্রাণনাশের আশঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। চরাঞ্চলের এই সাপ আতঙ্ক গোটা উপজেলার জন্যই এখন একটি জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাজনিত সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপই হতে পারে মানুষের জীবনের রক্ষাকবচ।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলার চরমহিদাপুর ও মজলিসপুর এলাকায় ৩জনকে চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপে ছোবল দিয়েছে। তিনি বলেন, জানামতে দুইজন এখন পর্যন্ত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। অন্যজনের অবস্থা এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। 

আবীর

×