ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১

বাংলাদেশ আর আগের মতো নরম নেই! তবুও, কেন উল্টো পথে হাঁটছে মোদি সরকার?

প্রকাশিত: ০০:৪২, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ আর আগের মতো নরম নেই! তবুও, কেন উল্টো পথে হাঁটছে মোদি সরকার?

ছবিঃ সংগৃহীত

পণ্যজটের অজুহাত দেখিয়ে হঠাৎ করেই ভারতের উপর দিয়ে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে নয়া দিল্লি। গত ৮ এপ্রিল নেয়া এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠলো মোদি সরকারের অভ্যন্তরে চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার ঝড় উপস্থিতি। ঢাকায় একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিজেকে তুলে ধরছিল দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক হাব হিসেবে। ঠিক সেই মুহুর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ডের এমন ঘোষণার পরপরই ছড়াতে শুরু করে নানামুখী গুঞ্জন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য ঢাকায় বহুজাতিক সম্মেলনের মাঝেই কেন এমন সিদ্ধান্ত দিতে হলো নয়া দিল্লিকে।

এর মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি কি দিতে পারে পরোক্ষ কোন সতর্কবার্তা। গত ৭-১০ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২০০ বিনিয়োগকারীর সামনে আঞ্চলিক বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ তুলে ধরাই ছিলো সম্মেলনের উদ্দেশ্য। 

বাংলাদেশ যেন দিল্লির ছায়া ছেড়ে বেশি দূরে না সরে যায় এবং নিজের পরিচয় নিয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে মাথা সোজা করে দাঁড়াতে না পারে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে কৌশলগতভাবে সেটাই যেন মনে করিয়ে দিতে চাইলো ভারত। এমন ধারণা অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞের।

তবে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হলেও ভারতের উপর দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যে কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই উল্টো অবস্থান নিয়েছে সবসময় বন্ধু হিসেবে দাবি করা প্রতিবেশী দেশ ভারত। দিল্লির এবারের সিদ্ধান্তে ভারতের তাৎক্ষণিক সীমিত লাভ হলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা হারাবে একটি লাভজনক বাণিজ্যিক প্রবাহ। দিল্লির বিমানবন্দর দিয়ে পশ্চিমা বাজারে পণ্য পাঠানোর ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট ফি, মজুরি এবং পণ্য পরিবহনের বিপরীতে ভারতীয় বন্দরগুলো আয় করতো মোটা অঙ্কের রাজস্ব। এখন বন্ধ হয়ে যাবে সেই আয়ের উৎস। ট্রানশিপমেন্ট রুট ভারতের নিজের জন্য লাভজনক হলেও কেবল রাজনৈতিক উত্তেজনার জন্যই কি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলো নয়াদিল্লি।

ভারতের বিকল্প হিসেবে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সাথেও জোরেসোরে উন্মুক্ত হয়েছে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসার নানামুখী সম্ভাবনা। ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে আকাশপথে রপ্তানি সক্ষমতা। সম্প্রসারণ হচ্ছে নিজস্ব সমুদ্র বন্দর। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আমদানি-রপ্তানির নতুন নতুন রুট। দিল্লির সিদ্ধান্তে বিচলিত হবার বদলে নিজের শক্তি দিয়ে বিকল্প পথ তৈরির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের প্রতি মুখাপেক্ষীতা কমিয়ে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়।

ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে ভারত হয়তো চেয়েছিল বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে। কিন্ত সেই কৌশলগত ষড়যন্ত্রে নিজেরাই পড়ছে নিজেদের ফাঁদে। ঢাকার কূটনৈতিক চালে ভারত হয়তো এবারই বুঝলো বাংলাদেশ আর আগের মত অনুগত প্রতিবেশী নেই। বরং ভারতের বলয়ের বাইরে গিয়ে ঢাকা নিতে পারে শক্তিশালী অবস্থান। মোদি সরকারের রপ্তানি রুট বন্ধ করার জবাব কীভাবে দিবে বাংলাদেশ সেটার দিকে থাকবে সবার নজর।

 

সূত্রঃ https://youtu.be/mMve5FXAJT8?si=TIh-8hLFsOfpmDDY

রিফাত

×