
ছবি: সংগৃহীত
যশোরে মুক্তেশ্বরী নদী দখল করে আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাচীর ও প্রতিষ্ঠান দুটিতে যাতায়াতের জন্য নদীর উপর নির্মিত অবৈধ সেতুটি অপসারণে চিঠি দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত ৮ এপ্রিল পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী জি এম রাইসুল ইসলামের সাক্ষরিত চিঠি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। ২০১৪ সালে বিগত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শহরের পুলেরহাটে মুক্তেশ্বরী নদীর আধা কিলোমিটার অংশ দখল করে বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করে আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়; নদীর মাঝখানে কংক্রিটের খুঁটি দিয়ে নির্মাণ করা হয় লোহার সেতু। সেতু ও হাসপাতালটি নির্মাণে নদীর এই অংশ এমনভাবে দখল আর শাসন করা হয়েছে যে বোঝার উপায় নেই এটিই একসময়কার প্রমত্ত মুক্তেশ্বরী। যা নিয়ে গত দৈনিক জনকন্ঠের অনলাইনসহ অন্যান্য পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আদ্ দ্বীন সকিনা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ এবং আদ্ দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সীমানা প্রাচীর সিএস ম্যাপে প্রদর্শিত মুক্তেশ্বরী নদীর খাস জমির মধ্যে রয়েছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মুক্তেশ্বরী নদীর উপর একটি অবৈধ ব্রীজ নির্মিত হয়েছে। যার ফলে মুক্তেশ্বরী নদীর পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হয়ে মুক্তেশ্বরী নদীটি মৃতপ্রায় পরিণত হয়েছে। যশোর শহরের বিভিন্ন অংশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় আপনাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিএস ম্যাপে প্রদর্শিত মুক্তেশ্বরী নদীর খাস জসি হতে সীমানা প্রাচীরটি অপসারণ ও মুক্তেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত ব্রীজটি অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
কয়েক দফা মুক্তেশ্বরী নদী অবৈধ দখলের যে তালিকা প্রকাশ করে মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলন কমিটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই তালিকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতাল রয়েছে। তাদের অংশে নদীর শূন্য দশমিক ৬১ একর বা ৬১ শতক দখলে রয়েছে। পুলেরহাট এলাকার সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব কোনা থেকে নদীতীরে গড়ে উঠেছে পাঁচ শ’ শয্যাবিশিষ্ট আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। নদীর তীরে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। নদীর তীর দখল করে কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই বিভিন্ন ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। নদীপাড়েই হাঁস-মুরগির বিভিন্ন ঘরও নির্মাণ করেছে আদ্-দ্বীন। তবে শুধু প্রাচীর ও অবৈধ সেতুটি অপসারণে সেতু দেওয়াতে ক্ষুদ্ধ মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দরা। তারা নদীর ফোরশোরে আদ্ দ্বীনের সকল অবৈধ স্থাপনা অপসারণের দাবি জানিয়েছে। দায়সারাভাবে কোন ব্যবস্থা নিলে প্রতিবাদ কর্মসূচি হাতে নিবেনও বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির উপদেষ্টা ইকবার কবির জাহিদ। তিনি বলেন, ‘নদীর যে এরিয়া রয়েছে; সেখানে আদ্ দ্বীনের অনেক স্থাপনা দখল হিসাবেই রয়েছে। সেই পর্যন্ত উচ্ছেদ হতে হবে। কারণ এই নদী যশোরের দুঃখ ভবদহের সংযোগ। এই নদীর নাব্যতা প্রয়োজন।’
এই বিষয়ে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ারের পরিচালক ফজলুল হকের মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তবে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার তরিকুল ইসলাম তারেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাচীর ও নদীর ব্রীজটি অপসারণে চিঠি পেয়েছি। কি লেখা আছে পড়া হয়নি। এই বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান তিনি।’
আর পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আদ্ দ্বীন মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিরাও আমার সঙ্গে দেখা করেছে। তারা নদীর উপর ব্রীজটি সরানোর প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। একই সাথে আদ্ দ্বীন কর্তৃপক্ষ সেতুটি অপসারণ করে নিজস্ব অর্থায়নে স্থায়ী আরেকটি সেতু নির্মাণের ডিজাইন করেছে। সেটির নকশা যাচাই বাছাই করে জেলা পানি সম্পদ কমিটির সিন্ধান্তের পর অনুমতি দেওয়া হবে। নদীর পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হয় এমন কিছু করতেও দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক চারবারের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের ভাই। অভিযোগ রয়েছে, বিগত দিনে ডা. শেখ মহিউদ্দিন শেখ আফিল উদ্দিনের প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করেছেন। এছাড়া শেখ মহিউদ্দিনের আরেক ভাই শেখ বশির উদ্দিন এখন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা। এসব কারণে নদী দখলের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন সেদিকে দৃষ্টি দেয় না।
সাজেদ রহমান/মেহেদী হাসান