
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের ওপর আঘাত মুসলিম উম্মাহ সহ্য করেত পারে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল আকসা, জেরুজালেমে লক্ষ লক্ষ নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজাড়িত। এই স্মৃতি মুছে দিয়ে ইহুদিরা ফিলিস্তিন দখল করতে যাচ্ছে। অথচ ফিলিস্তিনের দয়ায় ইসরায়েল সৃষ্টি হয়েছে।’
শনিবার (১২ এপ্রিল) মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীর যোগদানপূর্বক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘের সমস্ত বিধান উপেক্ষা করে আমেরিকার মদদে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে বর্বরোচিত হামলা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ প্রদত্ত দায়িত্বে নিয়োজিতদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যদি জাতিসংঘের বিধান বাস্তবায়ন করতে না পারেন, তবে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন।’
ফিলিস্তিনের প্রতি জামায়াতে ইসলামীর পূর্ণ সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বে ইসলামের বিজয় হবে। এই বিজয় নিশ্চিত করতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধভাবে ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ এছাড়া, বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, যারা আজ ফিলিস্তিনের জনগণের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে, এরা একসময় রিফিউজি ছিল। আরব নেতাদের দয়ায় ফিলিস্তিনের ভূখন্ডে এই ইহুদিগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তারা ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠন করে পশ্চিমাদের মদদে পুরো ফিলিস্তিন দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ফিলিস্তিন নিঃশেষ করতে বর্বরোচিত হামলা চালাচ্ছে। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল আকসা ধ্বংস করে লক্ষ লক্ষ নবী-রাসুলের স্মৃতি মুছে ফেলতে ইহুদিরা উঠেপড়ে লেগেছে।
মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ না হলে ইহুদিরা এই দুঃসাহসিকতা অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে মাওলানা রফিকুল ইসলাম সবাইকে ইহুদিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার এবং প্রতিহত করার আহ্বান জানান। এছাড়া, নেতানিয়াহুকে সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন বলেন, ‘ফিলিস্তিনের বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সারাবিশ্ব থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে। ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে হবে। দুইশ’ কোটি মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হলে দখলদার সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ইসরায়েলের পরজয় নিশ্চিত হবে।’
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইসরায়েল বছরের পর বছর ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বনেতারা বসে বসে সেটি উপভোগ করছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, জাতিসংঘের ভূমিকায় মুসলিম উম্মাহ বাকরুদ্ধ, বিক্ষুব্ধ।
ওআইসি’র বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে দক্ষ, সৎ, সাহসিক ও আল্লাহভীরু মানবিক নেতৃত্বের সমন্বয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে না পারলে দুইশ’ কোটি মুসলিম উম্মাহ বিক্ষুব্ধ হলে পশ্চিমারা আপনাদের ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবে না। তিনি দখলদার ইসরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দিতে ইসলামি রাষ্ট্রপ্রধানদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, মহানগরীর কর্মপরিষদের সদস্য যথাক্রমে মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, অধ্যাপক নুর নবী মানিক, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, ড. মোবারক হোসেন, কামরুল আহসান হাসান, শরীফুল ইসলাম, মহানগরীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমনসহ মহানগরীর মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং থানা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ শেষে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বেলা ১১টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষাধিক নেতাকর্মী যাত্রা শুরু করে।
ইসরাফিল ফরাজী/রাকিব