
ছবিঃ সংগৃহীত
কয়লার নামে মাটি! মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা এক বিশাল চালানে এমনই চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারের এই ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা ৬৩ হাজার টন কয়লার চালান ফিরিয়ে দিয়েছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিসিএল), কারণ সেই কয়লায় ছিলো বিপুল পরিমাণ মাটি।
চালানটি পাঠিয়েছিল একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান, যারা টেন্ডারের মাধ্যমে কয়লা সরবরাহের দায়িত্ব পায়। কিন্তু কয়লার বদলে এমন নিম্নমানের মিশ্রণ পাঠিয়ে তারা দেখিয়ে দিয়েছে পুরনো এক শোষণের কৌশল। ঘটনাটি শুধু একটি বাণিজ্যিক প্রতারণা নয়, বরং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর আধিপত্য ও বাংলাদেশের উপর তাদের প্রভাবের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে।
চক্রান্তের ছায়া: শাসনের পেছনের গল্প
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেখ হাসিনার দীর্ঘ পনেরো বছরের শাসনে ভারতের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ও তোষামোদ এই ধরনের ঘটনার জন্ম দিয়েছে। গ্যাস, কয়লা, বিদ্যুৎ—প্রতিটি খাতে ভারতীয় কোম্পানিগুলো যে আধিপত্য গড়ে তুলেছে, তা আজ বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের ওপর বড় একটি প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনাটি সামনে আসার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোর ভূমিকা।
চালান প্রত্যাখ্যান ও তদন্ত
সিপিজিসিএল-এর নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হক জানান, কয়লায় মাটি মিশ্রিত থাকায় তারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অফিসিয়াল চিঠি দিয়ে চালান গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে যে, কয়লাবাহী জাহাজটিকে বহির্নোঙরে পাঠানো হয়েছে।
জাহাজটি ছিল সিপিএর পতাকাবাহী ‘এমভি ওরিয়েন্ট অর্কিড’। এটি পরিচালনা করছিল বাংলাদেশের মেঘনা গ্রুপ। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাগরণ শুরু?
বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের গর্জনের মতোই এই ঘটনা যেন এক নীরব জাগরণের সূচনা করেছে। প্রতারণা আর আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হচ্ছে সচেতনতা। এই ঘটনার মাধ্যমে দেখা গেল, সময় বদলেছে, শোষণের পুরনো খেলা আর আগের মতো সহজে চলবে না।
মোদী ফাইল বন্ধ করেও শুনতে পাচ্ছে সেই হুইসেল—মাটি ফিরিয়ে দেওয়ার জাহাজের শব্দ, এক নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয়ের প্রতিধ্বনি।
মারিয়া