
ছবি: রিউমর স্ক্যানার
সম্প্রতি একটি শিশুর হাতকড়া পরা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগকর্মী পিতাকে না পেয়ে পুলিশ ওই শিশুকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করেছে।
অনেকেই ছবিটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি বাচ্চাদের খেলনারহাতকড়া পরিহিত কোনো ছবি। তবে এসব কমেন্ট বা পোস্টের জবাবে ছবিটির প্রচারকারীরা প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিওর লিংক শেয়ার করে ভিডিওটিই ছবির ঘটনার প্রমাণ হিসেবে দাবি করেন।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে একজন মায়ের কোলে থাকা এক শিশু। সেই ভিডিওর শিশুটি এবং ভাইরাল ছবির শিশুটি দুটি আলাদা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শিশু দুটির চেহারায়ও স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ, ভিডিওটি ভাইরাল ছবির প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
তাহলে ভাইরাল ছবির শিশুটি কে এবং ছবিটির গল্পই বা কী?
ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে তেমন কোনো তথ্য না মিললেও একটি ফেসবুক মন্তব্য ভালো ‘ক্লু’ হয়ে ওঠে। এক ব্যক্তি চকরিয়া থানার সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা পারভেজের ফেসবুক আইডি ‘S R Parvez’কে মেনশন করে একটি পোস্টে লেখেন, ‘তোর ভাগ্নের যেমন খুশি তেমন সাজের ছবিটা ভাইরাল হয়ে গেল। এইটা কেবল তুই প্রতীকী ছবি হিসেবে ইউজ করেছিলি। কিন্তু এখন অনেকে শেয়ার করতেছে।’
এই মন্তব্যের জবাবে সোহেল রানা পারভেজ ভিডিওর শিশুটির ভিন্ন একটি স্ক্রিনশট যুক্ত করে লিখেন, ‘এইটা আমার ভাগিনা কেমনে সম্ভব? আমার বাড়ি কি নোয়াখালী?’
(এখানে ভাইরাল ছবির শিশুর প্রসঙ্গে না বলে ভিডিওর শিশুর প্রসঙ্গ টেনে উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা বলে প্রতীয়মান হয়। এবং আমাকে আরেক রিপ্লাইতে এটি তার ভাগিনা নয় বলে দাবি করেন বা অস্বীকার করেন)
পরে ওই কমেন্টকারী আবার ভাইরাল ছবিটি যুক্ত করে রিপ্লাই দেন, ‘এই ছবিটার কথা বললাম।’ তবে এরপর আর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে সেই মন্তব্যকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘সে (সোহেল রানা পারভেজ) আমাদের এলাকার। কয়েকদিন আগে ছবিটা পোস্ট করেছিল। আমরা সবাই বলার পর পরে সে পোস্টটা ডিলিট করে।’
তিনি ব্যক্তিগত বার্তায়ও ছবির শিশুটি ওই ছাত্রলীগ নেতার ভাগ্নে এবং সে ছবিটিতে খেলনার হাতকড়া ছিল বলে জানান।
সোহেল রানা পারভেজের ফেসবুক প্রোফাইলে খোঁজ নিয়ে গত বছরের একটি জন্মদিন উদযাপনের পোস্ট দেখা যায়, তার ভাগ্নের গতবছরের জন্মদিনের ছবির একটি শিশুর সঙ্গে ভাইরাল ছবির শিশুর মুখের মিল দেখা যায়। এছাড়া ভাইরাল ছবির হাতকড়াটি দেখতে প্লাস্টিকের হ্যান্ডকাফের মতো এবং প্লাস্টিকের খেলনা হাতকড়ার সাথে ভাইরাল ছবির হাতকড়ার মিল প্রতীয়মান হয়।
এছাড়াও, এতো ছোট একটি শিশুকে পুলিশ সত্যিই হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করেছে— এমন কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদসূত্র বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ছোট শিশুকে হাতকড়া পরানোর এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বা বিশ্বাসযোগ্যতাও অনেক কম। ফলে, ধারণা করা যায় ছবিটি প্রতীকী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল, এবং ছবিটি সম্পর্কে উপরের বর্ণনাটিই ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়।
অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে সোহেল রানা পারভেজ এর ওই পোস্টের স্ক্রিনশট খুঁজে পাওয়া যায়। হাত করা পরিহিত ভাইরাল ওই ছবিটি যুক্ত করে তিনি ক্যাপশনে লেখেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমার ভাগিনা ডেভিল হান্টে গ্রেফতার, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বি:দ্র: এইটা বাস্তবিক নয়, আসামির আদলে অভিনয় করেছে ভাগিনা।’
এই ক্যাপশনেই পোস্টটি তিনি করেছেন বলে তার ফুটপ্রিন্টও পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
উল্লেখ্য, সোহেল রানা পারভেজ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের সময় গ্রেফতার হয়ে মার্চে জামিনে মুক্তি পান।
অনুসন্ধানে ছবির গল্পটি পাওয়া যায়, সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা তার ভাগ্নের খেলনা হ্যান্ডকাফ পরিহিত ছবি প্রতীকীভাবে ব্যবহার করে একটি পোস্ট করেছিলেন, যা পরে সরিয়ে ফেলেন। আর পরবর্তীতে ছবিটি বিকৃত ব্যাখ্যায় ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, সম্প্রতি একটি শিশুর হাতকড়া পরা যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে, এবং বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগকর্মী পিতাকে না পেয়ে পুলিশ ওই শিশুকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করেছে- এটি দাবিটি ভুয়া এবং বানোয়াট। ছবির শিশুর হাতে পরানো হাতকড়াটি মূলত খেলনা হাতকড়া।
সূত্র: রিউমর স্ক্যানার
রাকিব