
বিএনপি যদি এতটাই জনপ্রিয় হয়, তবে ছাত্র সংসদ, স্থানীয় সরকার ও গণপরিষদ নির্বাচনের নাম শুনলেই খাপছে কেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরির পার্টি এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।
আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন এনসিপি নেতা শিশির।
শিশির তার পোস্টে বলেন, প্রতিদিনই বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক শক্তি বলে দাবি করে থাকেন। সকাল-বিকাল শুধু একটাই বুলি—জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাই, তাহলেই ৩০০ আসনের ৩০০-তেই তারা জয়ী হবেন!
ভালো কথা—এতই যদি জনপ্রিয়তা থাকে, তাহলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রস্তাব এলেই বুক কাঁপে কেন? আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কেন? জনপ্রিয়তা তো সকল স্তরের নির্বাচনে প্রকাশিত হওয়ার কথা!
যেসব সম্মানিত ভোটাররা জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, তারা কি ছাত্র সংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, জেলা কিংবা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দেবেন না? যদি জনপ্রিয়তার প্রতি এতো কনফিডেন্স থাকে, তাহলে বিএনপির এই পিছুটান কেন? নাকি বিএনপি নিজেই জানে, এসব নির্বাচনে তারা মুখ থুবড়ে পড়বে?
জুলাই বিপ্লবের প্রায় ২০০০ ছাত্র-জনতার রক্তে রচিত এই পরিবর্তন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সেই ছাত্ররাই সর্বাগ্রে দাবি জানিয়েছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। অথচ শহীদের রক্ত শুকানোর আগেই বিএনপি সেই দাবির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল—বলে বসল, আগে সংসদ নির্বাচন দরকার!
কিন্তু আমাদের প্রশ্ন—যে ছাত্রসমাজ জীবন দিয়ে দেশের জন্য লড়েছে, ভারতীয় এজেন্ট হাসিনা থেকে দেশটা স্বাধীন করে দিলেন- তারা ৩০-৩৫ বছর ধরে ছাত্র সংসদে ভোট দিতে পারেনি। এখন কেন ছাত্র সংসদের ভোটাধিকার বারবার উপেক্ষিত থাকবে?
আমাদের মনে রাখতে হবে; ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দেয়। ২০০১ সালে আবার ক্ষমতায় গিয়েও তা চালু করেনি। কেন করেনি? কোন গণতান্ত্রিক মূলনীতি বলে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের সেই প্ল্যাটফর্ম ধ্বংস করে দেওয়া যায়? বারবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র সমাজের ভোটাধিকার হরণ করে যাচ্ছে না বিএনপি?
বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন এড়িয়ে যেতে চায়। কেন? কারণ হয়তো—এই নির্বাচনে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণে বিএনপির গায়েবি জনপ্রিয়তার মুখোশ খুলে যাবে। নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি—সবকিছু জনসম্মুখে উন্মোচিত হবে।
আরেকটি কারণ হতে পারে—এনসিপি ও অন্যান্য উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তিগুলো জনগণের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেলে বিএনপির দখলদারিত্বের রাজনীতির জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়বে। তাই ভয়, তাই পিছু হটা?
বিএনপির প্রতি আমাদের আবেদন—দয়া করে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় বাধা হবেন না। আপনারা যদি সত্যিই জনগণের পক্ষের শক্তি হতে চান, তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন একসাথে করার উদ্যোগে সবার আগে এগিয়ে আসুন।
শিশির তার পোস্টে আরো বলেন, আর দেশের রাজনৈতিক সংস্কারে মৌলিক পরিবর্তন আনতে— গণহত্যাকারী ও শিশু হত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার মতো সাহসী পদক্ষেপ জনগণের পক্ষ থাকুন।
৫৪ বছর পর রাষ্ট্র সংস্কারের এমন বিরল সুযোগ এসেছে। তরুণ প্রজন্ম, ছাত্রসমাজ এবং সাধারণ মানুষ আর প্রতারণার শিকার হতে চায় না—তারা চায় বাস্তব ও টেকসই পরিবর্তন।
এখন বিএনপি কি এখন ইতিহাসের ঠিক পথে হাঁটবে? নাকি আবারও ভুল পথে গিয়ে গণআকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করবে?
ফুয়াদ