ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

রাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু কাল, ১২ পদক্ষেপ গ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ১১ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৭:০৮, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

রাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু কাল, ১২ পদক্ষেপ গ্রহণ

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্নাতক (সম্মান) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল শনিবার (১২ এপ্রিল)। 
'বি' ইউনিটের (বাণিজ্য) পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এ ভর্তিযুদ্ধ। এদিন বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক শিফটে অনুষ্ঠিত হবে পরীক্ষাটি। এতে পাঁচটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে মোট ৪২ হাজার ৪৪৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে রাবি কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করবে ১৩ হাজার ৬৩১ জন।

ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে রাবির শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ্ হাসান নকীব।

ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১২টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। সেগুলো হলোঃ
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য ৬টি হেল্পডেস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  অভিভাবকদের বসার জন্য সর্বমোট ১১টি অভিভাবক টেন্ট তৈরি করা হয়েছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ২টি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটসহ ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট স্থানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২৫০ জন সদস্য কর্মরত থাকবে। এছাড়াও ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জার গাইড ও স্টুডেন্টস কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ১০০ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবে। প্রতিটি একাডেমিক ভবনের প্রবেশ পথে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও রেজার গাইড নিয়োজিত থাকবে। প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে টহল ও পরীক্ষার দিনগুলোতে নিরাপত্তা বেস্টনী তৈরি করা হবে। ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ৬০ জন কোয়ান্টাম সদস্যসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য রোভার স্কাউট ও পিডিএফ সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। এস্টেট দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে অস্থায়ী খাবারের দোকান, স্থান নির্ধারণ, মূল্য নির্ধারণে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল বক্স স্থাপন করা হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রক্সিকান্ডের সাথে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্টর অফিস কর্তৃক চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য আরো বলেন, ১২, ১৯ ও ২৬ এপ্রিল যথাক্রমে বি, এ এবং সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কথা বিবেচনা করে এবার প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে আঞ্চলিক কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

এবছর এ, বি, সি এই তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। 'এ' ইউনিটে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ২৭টি বিভাগসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত আছে। 'বি' ইউনিটে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ৬টি বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এবং 'সি' ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত আছে।

এ বছর মোট আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩২৩টি। রাবি ছাড়াও ঢাবি, জবি, চবি, খুবি এবং রংপুর অঞ্চলে বেরোবিসহ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও দ্যা মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার আসন বিন্যাসসহ বিস্তারিত সময়সূচি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষার্থীদের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে তাদের আসন ও পরীক্ষা কেন্দ্র সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমেও এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।

উপাচার্য আরো বলেন, তিন ইউনিট মিলে রাবি কেন্দ্রে ৭২ হাজার ৩৫ জন; ঢাবি কেন্দ্রে ৮২ হাজার ৭৪১ জন; জবি কেন্দ্রে ১০ হাজার জন; বেরোবিসহ সন্নিহিত অন্য দুটো ভেন্যুতে ৩৫ হাজার ৬৩০ জন; খুবি কেন্দ্রে ২৩ হাজার ১৮ জন এবং চবি কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৯৯১ জন পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। এবার এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষা চলাকালে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবে না। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বিষয়ে উপাচার্য বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে, কখনও কখনও অসাধুচক্র ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকের নিকট থেকে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নিয়ে থাকে। তারা কখনও কখনও শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কাগজপত্র জমাও রাখে এবং রেজাল্ট শিটে নাম দেখেই অর্থ দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নিজ যোগ্যতায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও প্রতারণার শিকার হয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে এমন প্রতারকচক্রের খপ্পরে না পড়ার জন্য সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি। এ ধরনের কোনো কিছুর আভাস-ইঙ্গিত পেলে তা যথাশীঘ্র সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতেও পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। এখানে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা কারসাজির সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধন থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, বিষয় ও হল নির্বাচন, মাইগ্রেশনসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হবে। এতে করে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নির্ভুল ফল প্রকাশ করা এবং সর্বোপরি জাল-জালিয়াতি ও কারসাজি রোধ করা সম্ভব হবে। ভর্তি হবার সময়ও প্রতিটি বিভাগ পরীক্ষার্থীর কাগজপত্রসহ ছবিগুলো মিলিয়ে দেখবেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত মূল পরিচয়পত্র দেবার সময়ও ঐ পরীক্ষার্থীর ছবি আইসিটি সেন্টার মিলিয়ে দেখবেন। যদি এক্ষেত্রে কোনো অসংঙ্গতি পরিলক্ষিত হয় তাহলে শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ভর্তি-পরীক্ষা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। 

আবীর

×