
ছবি: সংগৃহীত
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রাঙ্গাবালীর কৃষক। স্থানীয়ভাবে সরাসরি এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে রাঙ্গাবালীর কৃষির উপর। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এর প্রভাব পরীক্ষিত হয়। তাই চাষাবাদে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি প্রধান রাঙ্গাবালীর মানুষকে প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিত্যনতুন সংকটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এসব সংকট মোকাবিলা কৃষকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
রাঙ্গাবালী উপজেলা চারদিকে নদী বেষ্টিত উপকূলীয় এলাকা। সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বাড়াতে একদিকে জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়েছে অন্য দিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নতুন নতুন সমস্যা তৈরী হচ্ছে কৃষি খাতে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন নিয়ে কাজ করছেন, ভার্ক এর প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃমোহসীন তালুকদার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিক্ষেত্রে বন্যা, অতিখরা, লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির কারণে জমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহের ফলে আমের মুকুল নষ্ট হচ্ছে ও নারিকেলের ফল ধারণ ব্যাহত হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙন বেড়েছে। চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন নদী ভাঙনের ফলে মানচিত্র থেকে মুছে যাবার মত অবস্থা। নদী ভাঙনের ফলে প্রচুর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে । প্রতি বছরই নতুন নতুন এলাকা নদীর ভাঙন কবলিত হচ্ছে এতে কৃষিজমি, বসতি, স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, জীবন ও জীবিকায় এর ব্যাপক প্রভাব পরছে।
উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের কৃষক মো: শাহিন হাওলাদার বলেন, এ বছর আমি আট একক জমিতে মূগ ডাল দিয়েছে কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় আমার কোন মূগ ডাল হয়নি। এমনি কি বৃষ্টি না থাকায় জমিতে ঘাস হয়নি। আমরা এখন গরু-ছাগল নিয়ে খুব বিপাদে আছি।
রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে শুধু রাঙ্গাবালী উপজেলা না বিশ্বের সকল দেশের উপর প্রভাব পরছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা একটি উপকূলীয় এলাকা জলবায়ু প্রভাব টা উপকূলের উপর বেশি পরছে বলে আমি মনে করি । রাঙ্গাবালী উপজেলা জলবায়ু পরিবর্তনে এ বছর রবিশস্যের উপর প্রভাব টা বেশি পরছে। তবে এলাকা ঘুরে দেখা যাচ্ছে যে, গত বছরের তুলনায় এ বছর রবিশস্য ফলন অনেক টা কম উৎপাদন হয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহে ছোট খাল, পুকুর,নালা,ডোবা, শুকিয়ে যাচ্ছে। যে কারণেও লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে কৃষক তার কৃষি কাজের আগ্রহ হারাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কৃষককে কি করতে হবে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমিতে সেচের ব্যবস্থা করার জন্য মিনি পুকুর কেটে মিঠা পানি দিতে হবে। রাঙ্গাবালী উপজেলায় যত গুলো স্লুইস গেট আছে সেগুলো মেরামত করতে হবে এবং কৃষি কাজে যেন নিয়মিত ব্যাবহার হয় সে দিক বিবেচনা করে পানি ওঠাতে এবং নামাতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের কে সুপারিশ করব যাতে তারা স্লুইস গেট গুলো যেন সচল রাখে। তার সাথে বলব, রাঙ্গাবালী উপজেলা যেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ এখান থেকে স্লুইস গেট গুলো যেন পরিদর্শন করে। তার সাথে খাল খনন করা যে খাল গুলো বাধ দেওয়া আছে সে গুলো কেটে পানি আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং জলবায়ু সহনশীল বীজ সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে।
মেহেদী হাসান