ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

ড. ইউনুস কুকুরকে পোষ মানাতে চাইছেন, উল্টা কুকুর কামড়ে দিতে পারে: ফরহাদ মজহার

প্রকাশিত: ০০:৪৬, ১১ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০০:৪৯, ১১ এপ্রিল ২০২৫

ড. ইউনুস কুকুরকে পোষ মানাতে চাইছেন, উল্টা কুকুর কামড়ে দিতে পারে: ফরহাদ মজহার

ছবি: সংগৃহীত

খ্যাতিমান লেখক ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার সতর্ক করে দিয়েছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিদেশী কর্পোরেট বিনিয়োগকে নিঃশর্তভাবে ইতিবাচক হিসেবে দেখা একটি মারাত্মক ভুল হতে পারে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনার পাশাপাশি এর অন্তর্নিহিত ঝুঁকি ও নেতিবাচক দিকগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি।

সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে ফরহাদ মজহার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা সরকার বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি সফল ‘ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তিনি চীন সফরে গিয়ে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করার চেষ্টা করেছেন।

ড. ইউনূসের বক্তব্যে উঠে আসে, “বাংলাদেশ নোনা দরিয়ার গার্ডিয়ান”—এই ধারণা। এটি একটি নতুন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযোগের দিগন্ত উন্মোচনের প্রস্তাব দেয়, যা প্রচলিত দিল্লিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে একটি বিকল্প ভাবনার সূচনা বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার। তার মতে, এই বক্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে, বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্স ও বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনার প্রেক্ষাপটে।

তবে তিনি সতর্ক করেন, বিদেশী কর্পোরেট বিনিয়োগ যেমন কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি স্থানান্তর, অবকাঠামো উন্নয়ন ও রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে, তেমনি পুঁজি প্রত্যাহার, পরিবেশগত ক্ষতি এবং অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বে হুমকির মতো গুরুতর চ্যালেঞ্জও ডেকে আনে।

ফরহাদ মজহার বলেন, “বাংলাদেশের মতো প্রান্তিক পুঁজির দেশে অবাধ বিদেশী বিনিয়োগ যদি শক্ত রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি ছাড়া হয়, তাহলে তা লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর স্বর্গে পরিণত হতে পারে।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অতীতে যারা দেশ থেকে অর্থপাচার ও লুটপাট করেছে, তারাই নতুন বিনিয়োগের আড়ালে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পেতে পারে। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস কুকুরের লেজ ধরে কুকুরকে পোষ মানাতে চাইছেন, কিন্তু উল্টো কুকুর কামড়ে দিতে পারে।”

বিশ্ব পুঁজিবাদের বাস্তবতায় প্রান্তিক অর্থনীতিগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, পুঁজিকে ভোক্তাভিত্তিক কাঠামো থেকে সরিয়ে উৎপাদনমুখী বিনিয়োগে রূপান্তর করা। ফরহাদ মজহারের মতে, এই রূপান্তরের জন্য শুধু সদিচ্ছা নয়, দরকার শক্তিশালী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত কাঠামো।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে এমন একটি গণমুখী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের, যা বৈষম্য কমাবে এবং দেশের সাধারণ মানুষকে উপকৃত করবে।

ফরহাদ মজহার উল্লেখ করেন, “যদি কর্পোরেট বিনিয়োগের নামে শুধু সস্তা শ্রম ও নিপীড়নের ভিত্তিতে অর্থনীতি এগিয়ে নিতে চাই, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে কালসাপে পরিণত হতে পারে।”

তিনি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (EPZ) ভিত্তিক বিনিয়োগ নীতিকে শ্রমিকদের জন্য আরও নিপীড়নমূলক বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো অর্থনৈতিক মডেল পরিবর্তন করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গতিশীল ব্যবস্থার দিকে যাওয়া।”

যদিও তিনি ড. ইউনূসের সদিচ্ছা ও আঞ্চলিক উন্নয়ন ভাবনার প্রশংসা করেন, তবে তার মতে, যদি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিতরে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন না আসে, তবে বিদেশী কর্পোরেট বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট শক্তির বাড়বাড়ন্ত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, “সাসকিয়া সাসেন তার ‘Expulsions’ গ্রন্থে যেমন দেখিয়েছেন, তেমনি কর্পোরেট প্রভাব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে সংকুচিত করে ফেলে।”

তিনি বলেন, “বঙ্গোপসাগরের গার্ডিয়ান হতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক চিন্তা হতে হবে গভীর, ভারসাম্যপূর্ণ ও বহুমাত্রিক। একমুখী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বৈশ্বিক পুঁজির বাস্তবতা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।”

https://www.facebook.com/100044316855162/posts/1278660090287874

এম.কে.

×